
সরকারি আবাস যোজনার ঘর দরিদ্র মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই না হয়ে পরিণত হয়েছে গুদামঘরে, যেখানে চলছে কন্ট্রাক্টরির রমরমা ব্যবসা! এমন বেনজির এবং চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে নদীয়ার শান্তিপুর সুত্রাগড় কুড়ি নম্বর ওয়ার্ডের বিসি রায় রোড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও পৌরকর্মী রাজু ঘোষের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় শাসকদলকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিজেপি সাংসদ।
অভিযোগের মূলে যা:
জানা গেছে, শান্তিপুর পৌরসভার কুড়ি নম্বর ওয়ার্ডের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা এবং একইসাথে পৌরসভার কর্মচারী রাজু ঘোষ ২০১৮ সালে সরকারি আবাস যোজনার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু নিজের দুটি পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও, তিনি এই সরকারি আবাস যোজনার ঘরে বসবাস না করে, সেটি পৌরসভারই এক ইঞ্জিনিয়ারের ব্যক্তিগত ইমারতি ব্যবসার জিনিসপত্র রাখার জন্য ভাড়া দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এর বিনিময়ে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের ভাড়া পান রাজু ঘোষ, এমনটাই দাবি স্থানীয় সূত্রের।
এলাকার সাধারণ মানুষ এবং বিরোধী দলের প্রশ্ন, যেখানে একই ওয়ার্ডে বহু প্রান্তিক পরিবার এখনও মাথার উপর ছাদ পায়নি এবং আবাস যোজনার জন্য দিনের পর দিন সরকারি দফতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেখানে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও এক প্রভাবশালী ব্যক্তি কিভাবে সরকারি সুবিধা নিয়ে তাকে ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করতে পারেন? এটি কি ক্ষমতার অপব্যবহার নয়?
রাজনৈতিক চাপানউতোর:
এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি সাংসদ তীব্র কটাক্ষ করেছেন শাসকদলকে। তিনি শাসক দলের স্বচ্ছতা এবং গরিব মানুষের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
যদিও এই বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর এবং শান্তিপুর পৌরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলের সদস্য শুভজিৎ দে জানিয়েছেন যে, বিষয়টি তাঁর সময়কালের নয়, তবে এটি অবশ্যই নিন্দনীয়। অন্যদিকে, পৌরসভার চেয়ারম্যান সুব্রত ঘোষ জানান, অভিযোগ জমা পড়লে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
অভিযুক্তের সাফাই:
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত পৌর কর্মচারী এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব রাজু ঘোষ। তিনি এটিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। রাজু ঘোষ বলেন, “পুরসভার সামান্য বেতনে কাজ করি, সেক্ষেত্রে পরিবারের খরচ যোগাতে সামান্য অর্থ উপার্জন হয় পড়ে থাকা এই ঘর থেকে সিমেন্ট রাখার ব্যবসা করা অন্যায় কোথায়! তবে ভাড়া দেওয়ার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
এই ঘটনা শান্তিপুরের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে শোরগোল ফেলেছে। সরকারি প্রকল্পের সুফল প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে আগামী দিনে আরও রাজনৈতিক চাপানউতোর বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।