
আদালতের নির্দেশে চাকরি হারানোর পর থেকে ধারাবাহিক আন্দোলনের পথে রয়েছেন রাজ্যের শিক্ষাকর্মীরা। বুধবার ফের পথে নামল ‘চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের যোগ্য অধিকার মঞ্চ’। করুণাময়ী থেকে এক প্রতিবাদী মিছিল করে তাঁরা এসএসসি (SSC) ভবনের সামনে এসে অবস্থান গ্রহণ করেন। এদিন এসএসসি চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতেও বৃষ্টি মাথায় করে স্লোগান আর দাবিতে অনড় থাকলেন আন্দোলনকারীরা, যা তাঁদের দৃঢ় সংকল্পের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
৩রা এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার পাশাপাশি শিক্ষাকর্মীরাও চাকরি হারান। ১৭ই এপ্রিল শীর্ষ আদালতের রায়ে যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেও, শিক্ষাকর্মীরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য তাঁদের জন্য মাসিক ভাতা ঘোষণার কথা জানিয়েছিলেন। গ্রুপ-সি’র জন্য ২৫ হাজার এবং গ্রুপ-ডি’র জন্য ২০ হাজার টাকা মাসিক ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও, হাইকোর্টের রায়ে সেই ঘোষণাও আইনি বাধার মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের অধিকার আদায়ে ফের পথে নামার ডাক দিয়েছিলেন চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা।
তিন দফা দাবি, অবিচল সংগ্রাম:
এদিনের কর্মসূচিতে চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের পক্ষ থেকে তিনটি মূল দাবি তুলে ধরা হয়। প্রথমত, যোগ্য ১২৫৫ জন গ্রুপ-সি এবং ২১৩৯ জন গ্রুপ-ডি, অর্থাৎ মোট ৩৩৯৪ জন যোগ্য শিক্ষাকর্মীর ‘সার্টিফায়েড লিস্ট’ অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে এসএসসি-কে। দ্বিতীয়ত, সিবিআই (CBI) দ্বারা উদ্ধারকৃত সকল ওএমআর (OMR) কপির স্ক্যান কপিগুলি অবিলম্বে এসএসসির ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। তৃতীয়ত, এই ৩৩৯৪ জন যোগ্য শিক্ষাকর্মীকে অবিলম্বে আইনি পদ্ধতি মেনে স্কুলে ফিরিয়ে নিতে হবে।
এই তিন দফা দাবিকে সামনে রেখেই আজ বেলা ১টা নাগাদ করুণাময়ী থেকে বিশাল মিছিল করে এসএসসি ভবনের সামনে আসেন আন্দোলনকারীরা। আগে থেকেই এসএসসি ভবনের সামনে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার অনিশ সরকার সামনের সারিতে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রথমে উইপ্রো মোড় থেকে করুণাময়ী যাওয়ার সামনের রাস্তা বন্ধ থাকলেও, পরে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
যোগ্য শিক্ষাকর্মী অধিকার মঞ্চের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এসএসসি অফিসের সামনে তাঁদের অবস্থান চলবে। বৃষ্টি এবং প্রতিকূল আবহাওয়াও তাঁদের অটল সংকল্প থেকে সরাতে পারেনি। আদালতের জটিলতা এবং প্রশাসনিক টানাপোড়েনের মাঝেও নিজেদের অধিকার আদায়ে তাঁদের এই অবিচল সংগ্রাম রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।