
পুরাণে ‘পৃথিবীর বৈকুণ্ঠ’ আর ‘পুরুষোত্তম পুরী’ হিসেবে খ্যাত জগন্নাথ ধাম হিন্দু ধর্মের চার মহাধামের এক—বদ্রীনাথ, দ্বারকা, রামেশ্বরম ও জগন্নাথপুরী। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথি থেকে (২৭ জুন ২০২৫) শুরু হয়ে ৫ জুলাই ঢাকের ধ্বনিতে নির্ঘুম পালা চলে, যখন ভগবান জগন্নাথ তাঁর ভাই বলভদ্র ও বোন সুভদ্রাকে নিয়ে মাসি বাড়ি, অর্থাৎ গুন্ডিচা মন্দিরে ত্রিমূর্তি–রথে রওনা হন।
তিন বিশাল রথের পরিচয়
১. নন্দীঘোষ রথ (জগন্নাথ)
২. তালধ্বজ রথ (বলভদ্র)
৩. দর্পদলন রথ (সুভদ্রা)
প্রতি রথই আকাশচুম্বী, তিন তলা বিশিষ্ট কাঠের বিশাল গাড়ি, যেগুলো টানতে হয় হাজারো ভক্তের বল ও ভক্তি।
কারগিল্মী: সাত করবারীর সুক্ষ্ম শিল্প
রথযাত্রার চাকা, কাঠ, লোহার বেল্ট, সাজসজ্জা—প্রতিটি উপাদানই নির্ভর করে সাত সম্প্রদায়ের কারিগরদের দক্ষতার ওপর:
বিশ্বকর্মা
রথের মৌলিক কাঠামো, উচ্চতা, নকশা নির্ধারণ করেন।
মালী
রথ ও দেবতার মূর্তির মালা–ফুলের সৌন্দর্য সজীব করেন।
দর্জি
রথের বিভিন্ন স্তরে ও দেবতার পোশাকে ব্যবহৃত বরণিল বস্ত্র–শোভাময় করে তোলেন।
ছুতোর
কারুকার্যে খোদাই করে কাঠের অতিরিক্ত অংশ তৈরি করেন; রথের ভেতর-বাইর সমস্ত কাঠের কাজ যত্নসহকারে সম্পন্ন করেন।
চিত্রকর
রথের বাহিরে বর্ণিল পশুরূপ, দেবদেবী, ফুলের মোতিফ আঁকে অলঙ্কার করেন।
কামার
লোহার নখ–বিন্দু, বেল্ট–বাঁধন ইত্যাদি নকশা করে রথকে মজবুত করেন।
কুমোর
তিন রথের বিশাল চাকা সৃষ্টিতে নৈপুণ্য দেখান—সুসমন্বিত আকৃতি ও ভারবহন ক্ষমতা নিশ্চিত করেন।
এসব জনশক্তি ছাড়াও হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী, ভক্ত ও প্রশাসনিক দল মিলে মাস মুড়ে চলে রথ প্রস্তুতি।
জগন্নাথ রথযাত্রা শুধু ভগবানের যাত্রা নয়; এক সম্মিলিত শিল্প–শ্রম ও আধ্যাত্মিক চেতনার উৎসব, যেখানে প্রতিটি কাঠের ডগা থেকে শুরু করে রঙ–পুতির ঝাঁকুনি, সব মিলিয়ে ফুটে ওঠে ‘ভ্রাতৃত্ব ও একতার মহাপ্রতিমা’।