কোন অ্যাপ লুকিয়ে ফোনের ডাটা চুরি করছে বুঝবেন যেভাবে, জেনেনিন কয়েকটি লক্ষণ

স্মার্টফোন এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সোশ্যাল মিডিয়া, ছবি এডিটিং, এআই থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা কাজে আমরা অসংখ্য অ্যাপ ব্যবহার করি। কিন্তু সাবধান! কিছু অ্যাপ দেখতে খুব সাধারণ হলেও, সেগুলো মোটেই নিরীহ নয়। আপনার অজান্তেই, আপনার অজান্তেই, কিছু অ্যাপ গোপনে আপনার ফোনের ব্যক্তিগত ডেটা চুরি করছে।

এই ধরনের ‘স্পাই অ্যাপ’ চেনা খুব সহজ কাজ নয়। তবে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখলে আপনি এদের চিনতে পারবেন এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। আপনার ফোন নিরাপদ রাখতে নিচের সহজ কৌশলগুলো জেনে নিন:

১. ফোনের অস্বাভাবিক চার্জ কমে যাওয়া: আপনার ফোনের ব্যাটারি অস্বাভাবিক দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে? যদি এমনটা হয়, তাহলে সতর্ক হোন। হতে পারে ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনো স্পাই অ্যাপ নিরন্তর চলছে, যা আপনার ব্যাটারির শক্তি শুষে নিচ্ছে। সমাধান: ফোনের ব্যাটারি সেটিংসে যান এবং দেখুন কোন অ্যাপ সবচেয়ে বেশি ব্যাটারি ব্যবহার করছে।

২. ফোন হঠাৎ গরম হয়ে যাওয়া: খেয়াল রাখুন আপনার ফোন হুটহাট গরম হয়ে উঠছে কি না। যদি ফোন ব্যবহার না করা সত্ত্বেও গরম থাকে, মনে হয় যেন এক্ষুনি আপনি ফোন ব্যবহার করে শেষ করেছেন, তাহলে এটি একটি সতর্কসংকেত। সমাধান: ফোন ব্যবহার না করার সময়ও গরম থাকলে সেটিংস ও অ্যাপ ব্যবহারের দিকে নজর দিন।

৩. অস্বাভাবিক ডেটা খরচ: আপনার মাসিক ডেটা ব্যবহারের দিকে নজর দিন। যদি আপনার স্বাভাবিক ব্যবহারের চেয়ে হঠাৎ করে ডেটা খরচ লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে, তাহলে এটি একটি বড় ইঙ্গিত যে কোনো অ্যাপ গোপনে ডেটা ব্যবহার করছে। সমাধান: ফোনের ডেটা ইউসেজ (Data Usage) সেকশনে গিয়ে দেখুন কোন অ্যাপ অস্বাভাবিক ডেটা খরচ করছে।

৪. ফোনের অ্যাপ ড্রয়ার ও সেটিংস চেক করুন: অনেক সময় স্পাই অ্যাপ এমনভাবে লুকিয়ে থাকে যে তাদের চেনা কঠিন। সাধারণত তারা কোনো চেনা অ্যাপের ছদ্মবেশ ধারণ করে অথবা অ্যাপ ড্রয়ারে দেখাই যায় না। সমাধান:

  • অ্যান্ড্রয়েড: সেটিংস (Settings) থেকে অ্যাপস (Apps) বা অ্যাপ্লিকেশন ম্যানেজারে (Application Manager) যান। সেখানে ‘সিস্টেম সার্ভিস’ (System Service) বা ‘ডিভাইস হেলথ’ (Device Health) এই ধরনের কোনো সন্দেহজনক অ্যাপ আছে কিনা লক্ষ করুন। প্রয়োজনে ‘শো সিস্টেম অ্যাপস’ (Show System Apps) অপশনে গিয়ে লুকানো সিস্টেম লেভেল অ্যাপ খুঁজুন।
  • আইফোন: সেটিংস (Settings) থেকে জেনারেল (General) এবং তারপর আইফোন স্টোরেজে (iPhone Storage) গিয়ে আপনার সমস্ত অ্যাপের তালিকা খুঁটিয়ে দেখে নিন।

৫. ফোনের পারমিশন সেটিংস চেক করুন: অনেক স্পাই অ্যাপ আপনার ফোন থেকে তথ্য চুরি করার জন্য ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, লোকেশন বা কন্ট্যাক্টসের মতো সংবেদনশীল পারমিশন চেয়ে থাকে। সমাধান:

  • অ্যান্ড্রয়েড: সেটিংস (Settings) থেকে প্রাইভেসি (Privacy) এবং তারপর পারমিশন ম্যানেজার (Permission Manager) এ যান। সেখানে প্রতিটি পারমিশন ধরে ধরে দেখুন কোন অ্যাপকে অযাচিত অ্যাক্সেস দেওয়া হয়েছে।
  • আইফোন: সেটিংস (Settings) থেকে প্রাইভেসিতে (Privacy) গিয়ে দেখুন কোন কোন অ্যাপকে ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও লোকেশনের অ্যাক্সেস দিয়েছেন। সন্দেহজনক অ্যাপের পারমিশন দ্রুত বন্ধ করুন।

৬. ফোনের সিস্টেমে মনিটরিং টুল আছে কি না: অনেক স্পাই অ্যাপ রিমোট সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডেটা পাঠায়। সমাধান: আপনার ফোনে ওয়্যারশার্কের (Wireshark) মতো কোনো মনিটরিং টুল ইনস্টল করা হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখুন। এছাড়াও, আপনার ওয়াই-ফাই রাউটারে কোনো অচেনা কানেকশন থেকে লগইন করা হয়েছে কি না, সেটিও যাচাই করে নিন।

৭. ফোনের পারফরম্যান্স অস্বাভাবিক ধীর গতি: যদি আপনার ফোন হঠাৎ করে ধীর গতিতে কাজ করা শুরু করে, অ্যাপ খুলতে বা বন্ধ করতে বেশি সময় লাগে, তাহলে সেটি স্পাই অ্যাপের উপস্থিতির একটি লক্ষণ হতে পারে। সমাধান: ক্যাশে পরিষ্কার করুন এবং অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আনইনস্টল করুন। সমস্যা না কমলে স্পাই অ্যাপের সন্দেহ করতে পারেন।

৮. অপরিচিত পপ-আপ বা মেসেজ: অপরিচিত বা সন্দেহজনক পপ-আপ বিজ্ঞাপন বা মেসেজ আসা শুরু করলে সতর্ক হোন। সমাধান: এমন পপ-আপ বা মেসেজে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন এবং ফোনের নিরাপত্তা স্ক্যান করুন।

আপনার স্মার্টফোনকে সুরক্ষিত রাখতে এই বিষয়গুলো নিয়মিত পরীক্ষা করুন। মনে রাখবেন, সামান্য সচেতনতাই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy