ঘাটালে জলবন্দী জীবন, ত্রাণের ভরসায় দুর্গতরা, ‘মাস্টার প্ল্যান’ বিতর্কে এবার মুখ খুললেন দেব

প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ষার জলে ডুবল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল। ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে, স্কুল-পাঠশালা বন্ধ, আর দুর্গত মানুষজন ত্রাণের আশায় দিন গুনছেন। এই বন্যা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জোর তরজা। বিশেষত ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেবকে ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়িত না করার অভিযোগে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। এবার সেই বিতর্কের জবাব দিতে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুললেন দেব।

জনগণের অভিমান স্বাভাবিক, সরকারের পাশে থাকার বার্তা দেবের:

বন্যা কবলিত মানুষদের দুর্ভোগ অনুধাবন করে দেব তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে প্রথমেই লিখেছেন, বন্যা হলে মানুষকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তাতে তাঁদের অভিমান হওয়াই স্বাভাবিক। একইসাথে তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, রাজ্য সরকার এই দুর্গত মানুষদের পাশে রয়েছে।

‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ আটকে থাকার কারণ: কেন্দ্রের উপর দায় চাপালেন দেব

দীর্ঘদিনের ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ কেন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, সেই প্রশ্নে দেব কার্যত কেন্দ্রকেই দায়ী করেছেন। তিনি লিখেছেন, “বিগত দশ বছর ধরে লোকসভার সকল অধিবেশনে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে সপক্ষে সওয়াল করে এসেছি। অনেক চেষ্টার পরও কেন্দ্রীয় সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।” এরপর তিনি জানান, ২০২৪ সালে রাজ্য সরকারই এই প্রকল্পের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং এক তৃতীয়াংশ বাজেট (৫০০ কোটি টাকা) বরাদ্দ করে।

কবে শেষ হবে এই মহাপ্রকল্প? সময়সীমা জানালেন সাংসদ

এই বহু প্রতীক্ষিত প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে, সেই বিষয়েও দেব একটি সময়সীমা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে এই মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরু হয়। ৭৮ কিলোমিটার + ৫২ কিলোমিটার নদীর ড্রেজিং থেকে শুরু করে বাঁধ, ব্রিজ, খাল কাটা, খালের সংস্করণ, কৃত্রিম নদী তৈরি করা, জমি অধিগ্রহণ সবই এর অন্তর্ভুক্ত। যার সময়সীমা কমপক্ষে ৪-৫ বছর।” অর্থাৎ, ঘাটালের মানুষজনের বন্যা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে আরও বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে।

ঘাটার মাস্টার প্ল্যানের দীর্ঘ ইতিহাস: এক স্বপ্ন যা আজও অধরা

প্রতি বছর বর্ষায় পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল বন্যার প্রকোপে বিপর্যস্ত হয়। একের পর এক বাড়ি ধসে যায়, তলিয়ে যায় আপনজন, গবাদি পশু সহ সবকিছু। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে ঘাটালবাসীকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যেই ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি হয়েছিল। পাঁচের দশকে বাম সাংসদ নিকুঞ্জবিহারী চৌধুরী প্রথম সংসদে ঘাটালের বন্যার সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এর পরই একটি বিশেষ কমিটি গঠিত হয়, যা ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’-এর প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব গৃহিতও হয়। তারপর শীলাবতী, ঝুমি সহ বহু নদী দিয়ে জল বয়ে গেছে, কিন্তু এই মহাপ্রকল্প আজও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। বাম আমল থেকে তৃণমূল আমল, সকলেই এই প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বললেও, তা আজও অধরাই রয়ে গেছে।

ঘাটালের মানুষজন এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, কবে এই ‘মাস্টার প্ল্যান’ সম্পূর্ণ কার্যকর হবে এবং তারা বন্যার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। দেবের এই বিবৃতি নতুন করে আশার আলো দেখালেও, কবে সেই আশা পূর্ণ হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy