
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল। জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও কেঁপে উঠেছিল এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলায়। সেই রক্তাক্ত ঘটনার ক্ষত আজও দগদগে ভারতের মনে ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার পরিসরে। ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভারত চালায় ঐতিহাসিক সামরিক অভিযান — ‘অপারেশন সিঁদুর’, যার মাধ্যমে পাকিস্তানের মাটিতে একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। হামলার তদন্তে নামে এনআইএ, এবং এবার সেই তদন্তে বড়সড় সাফল্য — জালে ধরা পড়েছে দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি-সহযোগী।
সূত্রের খবর, পহেলগাঁওয়ের হিলপার্ক এলাকা থেকে ধৃতরা হল পরভেজ আহমেদ জোথার এবং বশির আহমেদ জোথার। এনআইএ-র অভিযোগ, পহেলগাঁও হামলায় অভিযুক্ত তিন জঙ্গিকে এই দুই ব্যক্তি আশ্রয় ও রসদ দিয়ে সাহায্য করেছিল। হিলপার্ক অঞ্চলে মরশুমি কাঠের কুড়ে ঘরে তাদের থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল, জোগাড় হয়েছিল খাবারও।
ধৃতদের জেরা করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। তারা জানিয়েছে, পহেলগাঁও হামলায় জড়িত জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে আগত, এবং লস্কর-ই-তৈবা নামক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। এনআইএ ধৃতদের বিরুদ্ধে UAPA আইনের ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী মামলা রুজু করেছে।
এই ঘটনায় ফের একবার স্পষ্ট হল, সীমান্তের ওপার থেকে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ও তাদের স্থানীয় সাহায্যকারীদের সক্রিয়তা এখনও ভারতের নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
পহেলগাঁও হামলার কিছুদিনের মধ্যেই ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায়। সেনা সূত্রের মতে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি নিশানা করে হানা চালায় ভারতীয় সেনা, যার মধ্যে রাওয়ালপিন্ডির মতো উচ্চ নিরাপত্তা অঞ্চলও ছিল। একের পর এক সফল আঘাতে কেঁপে ওঠে পাকিস্তান। যদিও পরে যুদ্ধবিরতির আবহ তৈরি হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট জানান, ‘‘অপারেশন সিঁদুর এখনও থেমে নেই।’’
এই ঘটনার পর কাশ্মীর উপত্যকায় গোয়েন্দা নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। এনআইএ জানায়, ধৃতদের জেরা করে জঙ্গিদের ঘাঁটি, অস্ত্র জোগান, এবং স্থানীয় সমর্থকদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে তারা।
ভারতের তরফে বারবার জানানো হয়েছে, সীমান্তের ওপার থেকে আসা হুমকির বিরুদ্ধে কড়া প্রতিরোধ চালানো হবে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুধু প্রতিশোধ নয়, আগামী দিনের জঙ্গি আগ্রাসন রুখতেও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, এমনটাই মনে করছে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।