
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে ঘাটালের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ সম্পূর্ণ করে ফেলার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিই এখন অধরা, আর তার ফল ভোগ করছেন ঘাটালবাসী। বর্ষার শুরুতেই ফের জলের তলায় চলে গেছে ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা, যা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বর্তমান বাস্তবতার এক চরম বৈপরীত্য তুলে ধরেছে।
অভিষেকের প্রতিশ্রুতি: আশা জাগিয়েও অধরা
গত ৭ এপ্রিল ২০২৪, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে ঘাটালের বুকে দাঁড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জোর গলায় বলেছিলেন, “২০২৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান করে দেবে রাজ্য সরকার।” এই প্রতিশ্রুতি ঘাটালবাসীর মনে আশা জাগিয়েছিল, কারণ প্রতি বছর বন্যার ভয়াবহতা তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। দশকের পর দশক ধরে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবি চলে আসছে। অভিষেকের এই আশ্বাস অনেকের কাছেই আশার আলো হিসেবে দেখা দিয়েছিল।
বাস্তবতার নির্মম চিত্র: ফের জলবন্দী ঘাটাল
কিন্তু অভিষেকের প্রতিশ্রুতির সময়সীমা পার হওয়ার পরেও, ২০২৫ সালের বর্ষার শুরুতেই ঘাটাল আবারও জলবন্দী। নদীগুলির জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, রাস্তাঘাট সব জলের নিচে। স্থানীয় মানুষ নৌকা ও ডিঙি করে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন, পানীয় জলেরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, বা হলেও তার প্রভাব এই বর্ষায় দেখা যায়নি।
প্রশ্ন উঠছে: প্রতিশ্রুতি না কি কেবল ভোটের কৌশল?
অভিষেকের সেই প্রতিশ্রুতিকে কেন্দ্র করে এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এটি হয়তো ভোটের আগে ভোটারদের মন জয় করার একটি কৌশল ছিল। যদি সত্যিই ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত হত, তাহলে এই বর্ষায় ঘাটালবাসীর এই দুর্ভোগ দেখতে হতো না।
ঘাটালবাসী দীর্ঘকাল ধরে বন্যার সমস্যায় জর্জরিত। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য উভয় সরকারের কাছেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বারবার আবেদন জানানো হয়েছে। রাজ্য সরকার নিজের অর্থে ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও, তা সম্পূর্ণ হতে আরও কয়েক বছর লাগবে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির এই বৈপরীত্য ঘাটালবাসীর মনে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি করেছে। প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবতার এই ফারাক আসন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে একটি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠবে।