
সিকিমে যতই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুর্ভোগের খবর আসুক না কেন, এই শৈলরাজ্যেই লুকিয়ে আছে অতুলনীয় সৌন্দর্য। বিশেষ করে উত্তর সিকিমের একের পর এক অনবদ্য ‘ভার্জিন লেক’ আপনাকে এক অন্য জগতে নিয়ে যাবে, যেখানে মনে হবে যেন নরওয়ে, কানাডা অথবা সুইজারল্যান্ডে পৌঁছে গেছেন। চারপাশে মেঘে ঘেরা এক অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত এই সাংলাফু চো লেক, যা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
ইউমেসামডং থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাংলাফু চো (লেক) এতদিন পর্যন্ত সাধারণ পর্যটকদের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। স্থানীয়দের কাছে ‘মহান লেক’ নামে পরিচিত এই হ্রদটি ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত পবিত্র হিসেবে বিবেচিত। মাত্র এক বছর আগে এটি প্রথম পর্যটকদের জন্য খোলা হয়েছিল, এবং তার আগে পর্যন্ত এটি সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত ছিল। ফলে এখানে আসা পর্যটকরা এক সম্পূর্ণ নতুন ও নিস্তব্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন।
সাংলাফু: প্রকৃতি ও পবিত্রতার মিশেল
ভারতের সিকিমের উত্তর-পূর্বে ৬,২২৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত সাংলাফু একটি অসাধারণ পর্বতশৃঙ্গ, যা ডংক্যা রেঞ্জের অংশ। এর পশ্চিম দিকে গুরুদংমার হিমবাহ থেকে জল প্রবাহিত হয়ে গুরুদংমার হ্রদে মিশেছে, যা লাচেন চু-এর প্রধান উৎস এবং তিস্তা নদীর জল সরবরাহ করে। হিমবাহের বিপরীতে ৬,৭১৫ মিটার (২২,০৩১ ফুট) উচ্চতায় গুরুদংমারের প্রধান চূড়াটি অবস্থিত। সাংলাফুর দক্ষিণ প্রান্তটি লাচুং চু থেকে নিষ্কাশিত হয়েছে। এছাড়াও ৫,০৮০ মিটার (১৬,৬৭০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত এই পাহাড়ি হ্রদ সাংলাফু চো এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণ।
অ্যাডভেঞ্চার ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্র:
সোনম গ্যাতসো মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, গ্যাংটকের পর্বতারোহীরা ১৯৯১ সালের ১লা অক্টোবর প্রথম সাংলাফু আরোহণ করেছিলেন। এই এলাকাটি অ্যাডভেঞ্চার পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়। তবে শীতের আগে, যখন তুষারপাত শুরু হয় না, তখন সব ধরনের পর্যটকই এখানে আসেন। এখানে গুরুদংমার এবং সাংলাফু চো নামে দুটি হ্রদ রয়েছে। সাংলাফু তার ধর্মীয় গুরুত্বের কারণে বিশেষ সতর্কতা ও পবিত্রতা বজায় রাখার দাবি রাখে। তাই গুরুদংমারে সাধারণত পর্যটকদের ভিড় বেশি দেখা যায়।
সিকিম পর্যটনের বিশেষ অনুরোধ:
সিকিম পর্যটন কর্তৃপক্ষ সকল দর্শনার্থীর কাছে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন যে, হ্রদ এলাকায় টেট্রা প্যাক সহ কোনো ধরনের প্লাস্টিক যেন বহন না করা হয়। এছাড়াও, সেখানে থুতু ফেলাও সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এই নিয়মাবলী কঠোরভাবে মেনে চলার কথা বলা হয়েছে এবং অন্যথায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতি ও পবিত্রতা রক্ষার এই উদ্যোগে পর্যটকদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
সুতরাং, যারা প্রকৃতির কোলে এক নির্জন ও পবিত্র অভিজ্ঞতা পেতে চান, তাদের জন্য উত্তর সিকিমের এই নব উন্মোচিত সাংলাফু চো লেক হতে পারে এক আদর্শ গন্তব্য।