
দেশের উৎপাদন খাত তলানিতে, বেকারত্ব রেকর্ড উচ্চতায় এবং চিন থেকে আমদানি দ্বিগুণ হয়েছে— এই অভিযোগ তুলে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকে ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’ বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুধুমাত্র স্লোগান তৈরিতেই পারদর্শী, সমাধানে নন।
সম্প্রতি দিল্লির নেহরু প্লেসের ইলেকট্রনিক্স মার্কেট পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। সেখানে মোবাইল তৈরি ও মেরামতের কাজ খুঁটিয়ে দেখেন এবং দুই টেকনিশিয়ান শিবম ও সইফের সঙ্গে কথা বলেন। এই কথোপকথনের একটি ভিডিও তিনি নিজেই তাঁর ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন।
‘চিনের লাভ হচ্ছে, ভারত শুধু অ্যাসেম্বল করছে’
মোবাইল তৈরির প্রক্রিয়া দেখে রাহুল দাবি করেন, ভারতে মোবাইল ফোনের মতো পণ্য শুধুমাত্র ‘অ্যাসেম্বল’ করা হয়, অর্থাৎ জোড়া লাগানো হয়। আসল যন্ত্রাংশগুলি বাইরে থেকে, বিশেষ করে চিন থেকে আমদানি করা হয়। এতে আখেরে চিনই মুনাফা লুটছে।
লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে রাহুল গান্ধী বলেন, “মেক ইন ইন্ডিয়াতে বলা হচ্ছিল শিল্প বিপ্লব হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। উৎপাদন তলানিতে, বেকারত্ব রেকর্ড হারে বেড়েছে, আর চিন থেকে আমদানিও দ্বিগুণ হয়েছে। সত্যিটা হলো – আমরা শুধু অ্যাসেম্বল করি, আমদানি করি, কিন্তু কিছুই তৈরি করি না। চিনই আসল মুনাফা করছে।”
‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ নয়, ‘অ্যাসেম্বল্ড ইন ইন্ডিয়া’
রাহুল গান্ধীর মতে, শুধু অ্যাসেম্বল করার ফলে বড় কোম্পানিগুলিই লাভবান হচ্ছে, কিন্তু দেশের সাধারণ যুবসমাজের জন্য নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “মানুষ ভাবে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ আর ‘অ্যাসেম্বল্ড ইন ইন্ডিয়া’ একই জিনিস, কিন্তু এটা ভুল। যতক্ষণ না ভারত নিজের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াচ্ছে, ততক্ষণ আমরা পিছিয়েই থাকব। মোবাইল ও ল্যাপটপ তৈরির খাত এখন পুরোটাই চিনের দখলে।”
মোদীকে কটাক্ষ: ‘শুধু স্লোগানেই ভরসা, সমাধান খোঁজায় নয়’
রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালের পর থেকে দেশে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের আয় জিডিপি-র মাত্র ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর খালি স্লোগান বানানোরই ক্ষমতা আছে। সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষমতা নেই। নতুন কোনও ভাবনাচিন্তা নেই। মোদী হার মেনে নিয়ে বসে আছেন।”
উল্লেখ্য, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বিজেপি সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল ভারতকে আন্তর্জাতিক স্তরে, বিশ্বের অন্যতম প্রধান উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করা, যা অনেকটাই চিনের ‘মেড ইন চায়না’ স্লোগানের অনুকরণে। রাহুলের এই আক্রমণ আসন্ন রাজনৈতিক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।