পাসওয়ার্ডের দিন শেষ? ফেসবুকে আসছে ‘পাসকি’, জেনেনিন কী সুবিধা পাওয়া যাবে?

সাইবার সুরক্ষায় এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটাতে চলেছে ফেসবুক। অনলাইন ফিশিং এবং তথ্য চুরির মতো ক্রমবর্ধমান হুমকি থেকে ব্যবহারকারীদের আরও বেশি সুরক্ষা দিতে অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মে চালু করা হয়েছে এক যুগান্তকারী ফিচার—’পাসকি’। ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা-র ঘোষণা অনুযায়ী, এই আধুনিক লগইন পদ্ধতি পাসওয়ার্ডের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে এবং আপনার অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

পাসওয়ার্ডবিহীন ভবিষ্যৎ: মেটা জানিয়েছে, পাসকি প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন ব্যবহারকারীরা পাসওয়ার্ড ছাড়াই ফেসবুকে লগইন করতে পারবেন। এর অর্থ হলো, আপনার স্মার্টফোন আনলক করার জন্য আপনি যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেস রিকগনিশন বা পিন ব্যবহার করেন, সেটি ব্যবহার করেই ফেসবুকে প্রবেশ করা যাবে। এর ফলে আর জটিল পাসওয়ার্ড মনে রাখার বা বারবার টাইপ করার ঝামেলা থাকবে না।

প্রাথমিকভাবে এই ফিচারটি শুধুমাত্র ফেসবুকের মোবাইল অ্যাপেই চালু হচ্ছে। তবে মেটা-র পরিকল্পনা অনুযায়ী, খুব শিগগিরই এই সুবিধা মেসেঞ্জারেও যোগ করা হবে। ভবিষ্যতে পাসকি ব্যবহার করে এনক্রিপটেড চ্যাট এবং মেটা পে-র মাধ্যমে পেমেন্ট তথ্য অটোফিল করার ব্যবস্থাও চালু করার লক্ষ্য রয়েছে।

পাসকি যেভাবে কাজ করে: পাসকি হলো এক নতুন ধরনের লগইন ব্যবস্থা, যা এফআইডিও (FIDO – Fast IDentity Online) অ্যালায়েন্সের অধীনে তৈরি হয়েছে। এটি মূলত একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক চাবি, যা ব্যবহারকারীর ডিভাইসে অত্যন্ত নিরাপদভাবে সংরক্ষিত থাকে।

  • অভেদ্য সুরক্ষা: পাসওয়ার্ডের মতো এটি চুরি করা বা অনুমান করা প্রায় অসম্ভব। প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য এটি আলাদা হয় এবং ফিশিং, ব্রুট-ফোর্স বা ক্রেডেনশিয়াল স্টাফিংয়ের মতো সাধারণ সাইবার আক্রমণের বিরুদ্ধে এটি অত্যন্ত কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
  • ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ব্যবহারকারী যখন পাসকি দিয়ে লগইন করেন, তখন তাঁদের বায়োমেট্রিক তথ্য — যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা মুখের ছবি — ফেসবুকের সার্ভারে শেয়ার হয় না। সব ধরনের যাচাইকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় শুধুমাত্র ব্যবহারকারীর ফোনেই, যা ডেটা সুরক্ষাকে আরও জোরদার করে।

ফেসবুকে পাসকি চালু করবেন যেভাবে: আপনার ফেসবুক অ্যাপের ‘অ্যাকাউন্ট সেন্টার’-এ গিয়ে পাসকি চালু করার বিকল্পটি পাবেন। এছাড়াও, লগইন করার সময় ব্যবহারকারীকে একটি প্রম্পটের মাধ্যমে পাসকি সেটআপ করার আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। একবার পাসকি চালু হলে, এটি ব্যবহারকারীর ইমেইল ঠিকানা বা মোবাইল নম্বরের ভিত্তিতে একটি নাম পাবে, যা পরবর্তীতে পরিবর্তন করা যাবে না, এমনকি ব্যবহারকারীর যোগাযোগের তথ্য আপডেট করলেও নয়।

কিছু সীমাবদ্ধতা: বর্তমানে এই ফিচারটি কম্পিউটার বা ওয়েব ব্রাউজারে উপলব্ধ নয়। তাই যারা ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ থেকে ফেসবুক ব্যবহার করেন, তাদের এখনো ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়েই লগইন করতে হবে। তবে ব্যবহারকারীরা চাইলে পাসওয়ার্ডও ব্যবহার করতে পারবেন। যাদের ডিভাইসে পাসকি সমর্থন করে না, তারা আগের মতো পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারবেন।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, মেটার এই পদক্ষেপ ডিজিটাল সুরক্ষায় এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ফেসবুক যখন বায়োমেট্রিক-ভিত্তিক নিরাপত্তার দিকে ঝুঁকছে, তখন এটা ধরে নেওয়াই যায় – অনলাইন দুনিয়ায় পাসওয়ার্ডবিহীন ভবিষ্যৎ আর খুব বেশি দূরে নয়। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য অনলাইন অভিজ্ঞতাকে যেমন সহজ করবে, তেমনই বাড়াবে নিরাপত্তা।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে ও দ্য ভার্জ

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy