
গ্ল্যামার আর অপরাধের এক নাটকীয় মোড়ে এসে শেষ হলো ইনস্টাগ্রামের আলো ঝলমলে জীবন। প্রায় ১৩ লক্ষ ফলোয়ারের সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার কীর্তি প্যাটেল, যিনি দীর্ঘ ১০ মাস ধরে ‘হানিট্র্যাপ’ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে পলাতক ছিলেন, অবশেষে গ্রেপ্তার হলেন। বুধবার আহমেদাবাদের সারখেজ এলাকা থেকে তাকে জালে তোলে পুলিশ, যার মাধ্যমে শেষ হলো তার দীর্ঘদিনের ‘অনলাইন পলাতক’ জীবন।
অভিযোগের সূত্রপাত: ২ কোটি টাকার ‘হানিট্র্যাপ’
২০২৪ সালের ২ জুন, সুরাটের এক নামী নির্মাতা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগ ছিল, কীর্তি প্যাটেল এবং তার কয়েকজন সহযোগী মিলে তাকে ব্ল্যাকমেল করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, প্রথমে ঘনিষ্ঠতার ছলে ওই নির্মাতাকে ফাঁদে ফেলা হয়, এরপর তার কাছে মোটা অঙ্কের ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হলে চারজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা গেলেও, কীর্তি তখন থেকেই গা ঢাকা দেন।
প্রযুক্তির ফাঁদেই ধরা পড়লেন ‘ডিজিটাল পলাতক’
১০ মাস ধরে কীর্তি প্যাটেলকে খুঁজে বের করা পুলিশের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ডেপুটি কমিশনার অলোক কুমার জানান, “আমরা ১০ মাস ধরে কীর্তি প্যাটেলের গতিবিধি নজরে রেখেছিলাম। প্রযুক্তি ও সাইবার টিমের সহায়তায় তাঁর অবস্থান ট্র্যাক করা সম্ভব হয়েছে। শেষমেশ আহমেদাবাদ পুলিশের সহযোগিতায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।” এই দীর্ঘ সময় কীর্তি একের পর এক মোবাইল নম্বর, সিম কার্ড এবং আইপি অ্যাড্রেস বদলিয়েছেন। এমনকি ইনস্টাগ্রামের সাথে সমন্বয় করে পুলিশ তার অনলাইন গতিবিধিও নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখে।
পলাতক থেকেও অনলাইন সক্রিয়তা: পুলিশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূত্র
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, পলাতক থাকা সত্ত্বেও কীর্তি প্যাটেল ইনস্টাগ্রামে বেশ সক্রিয় ছিলেন। নিয়মিত ভিডিও পোস্ট, রিল এবং অনলাইন লাইভে তাকে দেখা যেত। তার এই নিরবচ্ছিন্ন অনলাইন উপস্থিতিই শেষমেশ পুলিশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হয়ে দাঁড়ায়, যা তার অবস্থান নির্ণয়ে সহায়তা করে।
একাধিক অভিযোগের মুখোমুখি ‘কীর্তি আদালজা’
‘কীর্তি আদালজা’ নামেও পরিচিত এই ইনফ্লুয়েন্সারের বিরুদ্ধে শুধু এই ‘হানিট্র্যাপ’ মামলাই নয়, গুজরাট রাজ্যজুড়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক জমি দখল এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। সুরাট আদালত তার বিরুদ্ধে আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
ভবিষ্যতের পথ: আরও বিস্ফোরক তথ্যের সম্ভাবনা
গ্রেপ্তার হওয়ার পর কীর্তি প্যাটেলের বিরুদ্ধে থাকা বাকি মামলাগুলির তদন্তও নতুন করে শুরু হবে। ইতিমধ্যেই তার বয়ান রেকর্ড করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে আরও অনেক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসতে পারে, যা এই ‘হানিট্র্যাপ’ চক্রের গভীরতা প্রকাশ করবে।
একসময় যিনি ইনস্টাগ্রামের জনপ্রিয়তায় ভাসতেন, তিনিই আজ আইনের জালে। এই ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল যে, সোশ্যাল মিডিয়ার মোহের আড়ালে কীভাবে অপরাধের জাল বোনা হতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে।