
পশ্চিমবঙ্গের ওবিসি সার্টিফিকেট ইস্যু নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) সাম্প্রতিক রায় রাজ্য সরকারের জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আদালত একাধিক মুসলিম সম্প্রদায়কে এককভাবে ওবিসি তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়েছে। এই রায়ের ফলে রাজ্যের বহু মানুষ এবং প্রশাসন দ্বিধায় পড়েছে। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, আগামী ৩১শে জুলাই পর্যন্ত এই তালিকা স্থগিত থাকবে এবং সরকারকেও নতুন পোর্টাল তৈরির কাজ বন্ধ করে দিতে হবে।
বিতর্কের সূত্রপাত ও হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ
২০১০ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকার ৭৭টি মুসলিম সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। অভিযোগ উঠেছিল যে, এই প্রক্রিয়ায় সংবিধানের মূল নির্দেশ, অর্থাৎ পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর প্রকৃত তালিকা তৈরির আগে কোনো স্বাধীন কমিশনের সুপারিশ নেওয়া হয়নি। হাইকোর্ট তার রায়ে স্পষ্ট জানিয়েছে যে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ওবিসি তালিকা করা যায় না। সংবিধানের ১৫(৪) ও ১৬(৪) ধারা অনুযায়ী এই ধরনের সংরক্ষণ দিতে হলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
প্রভাবিত হতে পারে লক্ষাধিক সম্প্রদায়
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এই মুহূর্তে রাজ্যের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ যারা ওবিসি হিসেবে সার্টিফিকেট পেয়েছেন, তাদের সার্টিফিকেটের বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। শেখ, মোল্লা, পাঠান, সৈয়দ, সরকার ইত্যাদি মুসলিম উপশ্রেণীসহ প্রায় ৭৭টি সম্প্রদায় এই তালিকায় রয়েছে।
আদালত জানিয়েছে যে, ২০১০ সালের পর থেকে রাজ্য সরকার যে সার্টিফিকেট দিয়েছে, সেগুলি বাতিল নয়, কিন্তু সেগুলি ভবিষ্যতে বৈধ বলে ধরা যাবে না। এবং বর্তমানে এই সকল সার্টিফিকেটের মাধ্যমে কোনো সরকারি কাজ করা যাবে না। আগামী ২৪শে জুলাই এই মামলার ফের শুনানি হবে, তারপরে আদালতের তরফে সরকারকে কী নির্দেশ দেওয়া হয়, তার দিকেই সবার নজর।
ভবিষ্যৎ প্রভাব কী হতে পারে?
এই রায়ের ফলে রাজ্যে চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে ওবিসি কোটা পাওয়া অনেকেই সমস্যায় পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশাসনিক স্তরেও এর বড় প্রভাব পড়বে:
চাকরিতে নিয়োগে ওবিসি কোটায় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ নিয়ে অস্পষ্টতা দেখা যেতে পারে।
রাজনৈতিকভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে পারে।
তবে, যারা ইতিমধ্যেই ওবিসি সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরি বা শিক্ষায় সুযোগ পেয়েছেন, তাদের এখনই চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে জানানো হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে সার্টিফিকেট নবীকরণ বা নতুন আবেদন করার সময় নতুন নীতি কার্যকর হতে পারে।
উপসংহার
ওবিসি সার্টিফিকেট নিয়ে হাইকোর্টের এই রায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এক নতুন মোড় এনেছে। সংরক্ষণ নীতির ভিত্তিতে আইনি ও সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আবারও প্রমাণ করল এই রায়। এখন সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে থাকবে গোটা রাজ্য।