মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা যখন তুঙ্গে, ইরান ও ইজরায়েল সংঘাতের পঞ্চম দিনে মার্কিন সামরিক অভিযানের অনুমোদনের খবর যখন বিশ্বজুড়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছে, ঠিক তখনই এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে নিজের ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণের কৌশল’ নিয়ে মুখ খুললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সিএনএন-এর সাংবাদিক কেইটলান কলিন্সকে তিনি জানিয়েছেন, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হামলা নিয়ে তিনি ‘শেষ মুহূর্তে’ই সিদ্ধান্ত নেবেন।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন তার প্রশাসন ইতিমধ্যেই ইরানে সামরিক অভিযানের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়ে রেখেছে, কিন্তু চূড়ান্ত নির্দেশ জারি হয়নি।
সিএনএন-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “(ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ইস্যুতে) কী করতে হবে বা করা যেতে পারে— এ ব্যাপারে আমার কিছু আইডিয়া আছে, কিন্তু এখনও আমি কোনোটিই চূড়ান্ত করিনি। আমি বরাবরই শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিই, কারণ, আপনি জানেন, পরিস্থিতি যে কোনো সময় বদলে যেতে পারে। বিশেষ করে যুদ্ধের সময়। অনেক সময়েই যুদ্ধের সার্বিক গতিপ্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিস্থিতিও বদলে যায়।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্য একদিকে যেমন তার স্বকীয়, অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভঙ্গিমা তুলে ধরছে, তেমনই অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিকে ঘিরে তার গভীর চিন্তাভাবনার ইঙ্গিতও বহন করছে। ‘যুদ্ধ যেকোনো মুহূর্তে বদলে যেতে পারে’ – এই বাক্যটিই বুঝিয়ে দিচ্ছে, সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের আগে তিনি সমস্ত দিক বিচার করতে চাইছেন।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আসলে অপেক্ষা করছেন ইরান শেষ পর্যন্ত তাদের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে সমঝোতায় আসতে চায় কি না, তা দেখার জন্য। অর্থাৎ, সামরিক অভিযানের হুমকিকে একটি ‘চাপের কৌশল’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নমনীয় হয়।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, চলতি সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প তার সামরিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকগুলোতে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা তার সামনে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প এখনও কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় ‘সবুজ সংকেত’ দেননি, যা তার ‘শেষ মুহূর্তে’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কৌশলেরই অংশ।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের রেশ ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপ এক ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে বিশ্বজুড়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন এক পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের এই ‘শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত’ গ্রহণের প্রবণতা বিশ্ববাসীকে আরও উৎকণ্ঠায় রাখছে। ট্রাম্পের ‘আইডিয়া’গুলো শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
