OBC মামলার রায় কলেজে ভর্তি, চাকরির নিয়োগে কী প্রভাব ফেলবে? স্পষ্ট করলেন শিক্ষামন্ত্রী

এক গ্রীষ্মের দুপুরে যেন আচমকা মেঘ জমেছে রাজ্যের সামাজিক ন্যায় নীতির আকাশে। দীর্ঘদিনের চর্চিত ওবিসি সংরক্ষণ (OBC Reservation) সংক্রান্ত রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ আগামী ৩১শে জুলাই পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে ফের প্রশ্নচিহ্ন দানা বেঁধেছে।

হঠাৎ কেন এই ধাক্কা?

ঘটনার সূত্রপাত রাজ্যের তৈরি করা ওবিসি তালিকা নিয়ে। রাজ্য সরকার সম্প্রতি ১৪০টি জনজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি নতুন তালিকা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু এই সমীক্ষা পদ্ধতি নিয়েই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মামলাকারীরা। তাদের মূল অভিযোগ ছিল, সামাজিক, আর্থিক এবং পেশাগত দিক থেকে রাজ্যের সমস্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সঠিক ভাবে সমীক্ষা চালানো হয়নি। বরং জেলাভিত্তিক কিছু পরিবারের মধ্যে এই সমীক্ষা সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। উচ্চ আদালতের পূর্ববর্তী নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও, মোট জনসংখ্যার প্রেক্ষিতে রাজ্য আদৌ সমীক্ষা করেছে কি না, তা নিয়েই ঘোরতর আপত্তি উঠেছিল।

মামলাকারীদের দাবি ছিল, রাজ্যের কাছে মোট জনসংখ্যার সঠিক তথ্যই নেই। পুরোনো ওবিসি তালিকার সঙ্গে নতুন তালিকার ফারাকও সামান্য। সবচেয়ে বড় অভিযোগ, সঠিক তথ্য ছাড়াই বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে ওবিসি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপরন্তু, নতুন জনগোষ্ঠীকে ওবিসি’র আওতায় আনতে গেলে বিধানসভায় বিল পেশ করার যে নিয়ম, রাজ্য তাও মানেনি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, রাজ্য সরকার ও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ কমিশন আদালতের কাছে যুক্তি পেশ করে জানিয়েছে যে, সমস্ত নিয়ম মেনেই সমীক্ষা চালানো হয়েছে এবং তার রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সওয়াল-জবাব পর্ব শেষে আপাতত ৩১শে জুলাই পর্যন্ত রাজ্যের সিদ্ধান্তের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে দিয়েছে হাইকোর্ট।

ভর্তি ও নিয়োগের উপর কী প্রভাব?

আদালতের এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া এবং সরকারি চাকরির নিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে। যদিও আদালত কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই নির্দেশে আপাতত কোনও “প্রতিবন্ধকতা” নেই। উচ্চশিক্ষা দফতরও মঙ্গলবার জানিয়েছে, ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে তাদের পোর্টালে কোনও সমস্যা হবে না। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও আশ্বস্ত করে বলেছেন, “ওবিসি নিয়ে যদি ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা হয়, তখন আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত ভর্তি তো বন্ধ রাখা হবে না।”

কিন্তু আদালতের পর্যবেক্ষণ, “গত ১৫ বছর ধরে ওবিসি-র সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে রাজ্য। আইন অনুযায়ী ১০ বছর অন্তর অন্তর সমীক্ষা করতে হয়। তবে তা করা হয়নি।” এই মন্তব্যই রাজ্যের সমীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটি নিয়ে ইঙ্গিতবাহী।

অচেনা সুড়ঙ্গে ভবিষ্যতের পথ?

এই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ রাজ্যের সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একদিকে যখন রথের আগেই দুয়ারে জগন্নাথদেবের প্রসাদ পৌঁছানোর মতো অভিনব উদ্যোগ (যেমনটি “আরও পড়ুন” অংশে উল্লেখিত) রাজ্যের প্রশাসনিক দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছে, ঠিক তখনই ওবিসি সংরক্ষণের মতো একটি সংবেদনশীল ইস্যুতে আদালতের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সরকারকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে। ৩১শে জুলাইয়ের পর আদালত কী রায় দেয়, সেই দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে রাজ্যবাসী, বিশেষত হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা, যাদের ভবিষ্যৎ অনেকটাই এই রায়ের উপর নির্ভরশীল।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy