গোপালপুর সমুদ্র সৈকতে পুরুষসঙ্গীকে বেঁধে তরুণীকে গণধর্ষণ, ধৃত ৮ অভিযুক্ত

রাজা উৎসবের আনন্দ যখন গোপালপুর সমুদ্র সৈকতে ঢেউ তুলছিল, ঠিক তখনই সেই উৎসবের আড়ালে ঘটে গেল এক বীভৎস ঘটনা। জনপ্রিয় এই পর্যটন কেন্দ্রে প্রকাশ্য দিবালোকে, পুরুষ সঙ্গীর সামনেই গণধর্ষণের শিকার হলেন ২০ বছরের এক তরুণী। এই পাশবিক ঘটনায় শুধু স্থানীয়রাই নন, পর্যটন মহল এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত পর্যটকরাও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, গত রবিবার সন্ধ্যায় ‘রাজা উৎসব’ উপলক্ষে ওড়িশার এই জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পটে বেড়াতে গিয়েছিলেন নির্যাতিতা তরুণী এবং তাঁর পুরুষ বন্ধু। গোপালপুর সমুদ্র সৈকতের একটি নির্জন স্থানে তাঁরা বসেছিলেন। হঠাৎ তিনটি মোটরবাইকে প্রায় ১০ জন যুবক সেখানে আসে।

অভিযোগ অনুযায়ী, ওই যুবকরা প্রথমে তাঁদের ছবি তুলতে শুরু করে। এরপর সেই ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শুরু হয় হুমকি। আতঙ্কের রেশ কাটতে না কাটতেই, নির্যাতিতার পুরুষ বন্ধুর ওপর হামলা চালানো হয়। তাঁকে নির্মমভাবে হাত বেঁধে ফেলে দুষ্কৃতীরা। এরপর তরুণীকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় কাছেই একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। সেখানে অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজন তাঁকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।

এই পাশবিক ঘটনার পর, নির্যাতিতা ও তাঁর বন্ধু কোনওক্রমে নিজেদের মুক্ত করে গোপালপুর থানায় পৌঁছান এবং বিস্তারিত ঘটনার কথা জানান। খবর পেয়েই পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তদন্তকারী দল এবং প্রাথমিক অনুসন্ধান চালায়।

বেরহামপুরের পুলিশ সুপার সরবন বিবেক এম জানিয়েছেন, “এখনও পর্যন্ত আটজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে কারও বয়স ১৮ বছরের নিচে নয়। আমরা আরও কিছু অভিযুক্তের সন্ধান করছি। তদন্ত চলছে।” তিনি আরও জানান, “নির্যাতিতা তরুণী এবং ধৃতদের মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হচ্ছে। তরুণীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।”

এই ঘটনা গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে দিঘা সমুদ্র সৈকতে ঘটে যাওয়া একটি নৃশংস ঘটনার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। সেবারও পূর্ব মেদিনীপুরের এক তরুণী তাঁর বন্ধুর সঙ্গে দিঘা ঘুরতে গিয়ে হোটেলের ঘর দেখানোর নাম করে একটি অন্ধকার স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন। সেই সময়ও তাঁর বন্ধুকে বেঁধে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে।

গোপালপুর সি বিচে পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বহু পর্যটক বেড়াতে যান। সমুদ্র সৈকতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় পর্যটন মহল গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। স্থানীয়রাও গোপালপুর কাণ্ডে দ্রুত অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, সমুদ্র সৈকতের নির্জন স্থানগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানোরও জোরালো দাবি উঠেছে।

উৎসবের আড়ালে ঘটে যাওয়া এই নৃশংসতা আবারও পর্যটন কেন্দ্রগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার। এই ঘটনা রাজ্যের পর্যটন শিল্পে কতটা প্রভাব ফেলে, তা নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy