চোখ ফেটে বেরোচ্ছে জল, বুকে জড়িয়ে স্বামীর ছবি, কেদারনাথে মৃত পাইলটকে শেষ বিদায় সেনা স্ত্রী’র! ভিডিও

কেদারনাথের কাছে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত পাইলট, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) রাজবীর সিং চৌহানের শেষকৃত্যে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হলো। তাঁর স্ত্রী, ভারতীয় সেনার লেফটেন্যান্ট কর্নেল দীপিকা চৌহান, স্বামীর কফিন জড়িয়ে ধরে যেন সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। স্বামীর ছবির দিকে তাকিয়ে তাঁর চোখ থেকে অঝোরে ঝরছিল জল, যা সেনার পিক ক্যাপের আড়ালেও ঢাকা পড়ছিল না। কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি অঝোরে কেঁদে ফেলেন এবং স্বামীর কফিনের উপরে রাখা ছবিতে হাত বুলিয়ে দেন। মাত্র কয়েক মাস আগেই যে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন এই দম্পতি, তা এক নিমেষে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল দীপিকার এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে জয়পুর সহ পুরো ভারতবাসী শোকে স্তব্ধ। গত রবিবার কেদারনাথের কাছে যে হেলিকপ্টারটি ভেঙে পড়ে, তারই পাইলট ছিলেন ভারতীয় সেনার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) রাজবীর সিং চৌহান। সেদিন ভোরে কেদারনাথ থেকে ফেরার সময় গৌরীকুণ্ডের জঙ্গলে একটি বেসরকারি সংস্থার হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ে এবং তাতে আগুন ধরে যায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, হেলিকপ্টারে থাকা সাতজন আরোহীরই মৃত্যু হয়।

আজ রাজবীরের শেষযাত্রায় জয়পুরের শাস্ত্রীনগরের অসংখ্য মানুষজন পা মেলান। লিঙ্কডইন প্রোফাইল অনুযায়ী, রাজবীর ২০০৯ সালে ভারতীয় সেনায় যোগ দিয়েছিলেন এবং ১৫ বছর অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার পর গত বছর অবসর নেন। তাঁর ২,০০০ ঘণ্টার বেশি বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল। তিনি সেনার আর্টিলারি রেজিমেন্টের পাশাপাশি আকাশপথের অপারেশনেও যুক্ত ছিলেন। হেলিকপ্টার অভিযান, আকাশপথে সুরক্ষা এবং বিমান রক্ষণাবেক্ষণের মতো বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ।

সেনা থেকে অবসর নেওয়ার পর গত বছর অক্টোবর মাসে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) রাজবীর অসামরিক বিমান পরিবহণে যোগ দেন এবং অভিশপ্ত হেলিকপ্টার সংস্থাটির সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। এরমধ্যেই, মাত্র চার মাস আগে তিনি যমজ সন্তানের বাবা হয়েছিলেন। স্ত্রী এবং এই দুই নতুন সদস্যকে নিয়ে তিনি সবেমাত্র জীবনের এক নতুন এবং আনন্দময় অধ্যায় শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই এক ভোর সবকিছুকে চিরতরে শেষ করে দিল।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) রাজবীরের এক বন্ধু শোকাহত স্বরে জানান, “ও সবে নিজের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছিল। যমজ সন্তানের আগমনে পরিবার আনন্দে ভেসে গিয়েছিল। বাড়িতে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও চলছিল। কেউ ভাবতেও পারেননি যে এরকম ভয়ংকর ঘটনা ঘটে যাবে।” এই আকস্মিক দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো দেশের মানুষের মনে শোকের ছায়া ফেলেছে।