ঐতিহ্যের পাশে আধুনিকতার ছোঁয়া! গঙ্গার ধারে অত্যাধুনিক ডিআরএম ভবন, ‘লুক’ বদল স্টেশনের

একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে পূর্ব রেলের গর্ব, হাওড়া স্টেশন। নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে দূরপাল্লার যাত্রী – লক্ষ লক্ষ মানুষের যাতায়াতের এই প্রাণকেন্দ্র এবার এক নতুন রূপে সেজে উঠতে চলেছে। গঙ্গার পানে মুখ করে গড়ে উঠছে ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারের (ডিআরএম) এক অত্যাধুনিক নতুন ভবন, যা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। এটি শুধু একটি নতুন অফিস ভবন নয়, হাওড়া স্টেশনের সামগ্রিক আধুনিকীকরণের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
ঐতিহ্যের পাশে আধুনিকতার ছোঁয়া
পূর্ব রেল সূত্রে খবর, ব্রিটিশ আমলে তৈরি বর্তমান হাওড়া স্টেশন ভবনের সঙ্গেই রয়েছে পুরোনো ডিআরএম ভবন। বর্তমানে এই ভবনের সামনে রেলের গাড়ি রাখার কারণে যানজট এবং চলাচলে সমস্যা নিত্যদিনের ঘটনা। এর মধ্যে মেট্রো পরিষেবা শুরু হওয়ায় এবং স্টেশন পরিকাঠামো বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায়, নতুন ভবনের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
নতুন ডিআরএম ভবনটি হবে জি প্লাস ফাইভ অর্থাৎ ৫ তলা বিশিষ্ট। মোট সাড়ে ১২ হাজার বর্গমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই ভবনে থাকছে একটি সুবিশাল অডিটোরিয়াম, একাধিক মিটিং হল, এবং মাটির নিচে গাড়ি রাখার আধুনিক ব্যবস্থা। এই বিশাল প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি টাকা, যার বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইরকন (IRCON)।
সুবিধার নতুন ঠিকানা
এই নতুন ভবনে ডিআরএম অফিসের জন্য ১৫৩ বর্গমিটার, এডিআরএম অফিসের জন্য ৫০ বর্গমিটার, একটি আধুনিক অডিটোরিয়ামের জন্য ৩৮০ বর্গমিটার এবং মিটিং রুমের জন্য ১৫৩ বর্গমিটার জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও রেলের অন্যান্য অফিস এবং পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও থাকবে এখানে।
শুধু নতুন ভবনই নয়, হাওড়া স্টেশন চত্বরকে আরও সুসজ্জিত করতে মিউজিয়ামের সামনের রাস্তা চওড়া করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই অঞ্চলের অবৈধ দোকানপাট সরিয়ে একটি পরিচ্ছন্ন এবং সুগম পরিবেশ তৈরি করা হবে, যা যাত্রীদের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করবে।
স্টেশন পুনর্গঠনের মহাপরিকল্পনা
পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার মিলিন্দ কে দেওয়াসকার চলতি বছরের জানুয়ারিতেই হাওড়া স্টেশন চত্বরে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই সাতটি প্ল্যাটফর্মকে (১, ৮, এবং ১০ থেকে ১৪ নম্বর) বড় করার কাজ শুরু হয়েছে, যার সুবিধা আগামী বছরের মধ্যেই যাত্রীরা নিতে পারবেন।
এছাড়াও, স্টেশনের কার্যক্রমকে আরও সুচারু করতে একটি নতুন ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং বিল্ডিং তৈরি করা হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং হাওড়ার ডিআরএম জানিয়েছেন, দ্রুত এই কাজও শুরু হবে।
হাওড়া স্টেশন শুধু একটি পরিবহন কেন্দ্র নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গের এক ঐতিহাসিক প্রবেশদ্বার। এই আধুনিকীকরণের মাধ্যমে হাওড়া স্টেশন শুধু তার ঐতিহ্যকেই ধরে রাখবে না, ভবিষ্যতের দিকেও এক নতুন পদক্ষেপ ফেলবে। যাত্রীরা কি এই পরিবর্তনকে সাদরে গ্রহণ করবে? সময়ই তার উত্তর দেবে।