খোলা মাত্রই সমস্যা, ৫ ঘণ্টা দেরিতে খুলল এসএসসির ফর্ম ফিল-আপের পোর্টাল! ক্ষোভ আবেদনকারীদের

বহু প্রতীক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার ফর্ম পূরণের পোর্টাল সোমবার বিকেলে চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তা খুলতে খুলতে গভীর রাত গড়িয়েছে। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা দেরিতে, রাত ১০টা ৩৫ মিনিট নাগাদ স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর পোর্টাল চালু হয়। এই অপ্রত্যাশিত বিলম্ব নতুন করে বিতর্ক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, যার জন্য আবেদনকারীরা কমিশনের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন।
প্রাথমিকভাবে সোমবার বিকেল ৫টায় অনলাইন ফর্ম পূরণ শুরু হওয়ার কথা ছিল। এই বিলম্বের পেছনে বেশ কিছু কারণ উঠে আসছে। কমিশন ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, বিষয়ভিত্তিক শূন্যপদের তালিকা প্রস্তুত করতে সময় লাগা এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির প্রার্থীদের তালিকা সম্পূর্ণ করতে বিলম্ব হওয়া এর অন্যতম কারণ। পাশাপাশি, কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যাও দেরির জন্য দায়ী বলে দাবি করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ১৬ দিন সময় হাতে পেয়েও কেন কমিশন পোর্টাল চালু করার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করতে পারল না? আগাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও নির্ধারিত সময়ের এতটা পর পোর্টাল চালু হওয়ায় কমিশনের দক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে।
অন্যদিকে, পোর্টাল চালু হলেও বহু ‘যোগ্য’ চাকরিপ্রার্থী এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন। তাঁদের মতে, তাঁরা ইতিমধ্যেই আইনি লড়াইয়ে রয়েছেন এবং দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিতে রাজি নন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু পূর্বে দাবি করেছিলেন যে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার ‘যোগ্য’ প্রার্থী আইনি লড়াইয়ের পথ বেছে নিয়েছেন। যদিও তাঁদের একাংশের পক্ষ থেকে সরকারকে সহযোগিতা করার কথা জানানো হয়েছিল, সোমবার পোর্টাল খোলার পর দেখা যাচ্ছে যে অনেকেই ফর্ম পূরণ থেকে বিরত থাকছেন।
ওয়েস্ট বেঙ্গল আনটেনডেড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (WBUTA) সাফ জানিয়েছে, তাঁদের কোনো সদস্য এই নিয়োগের ফর্ম পূরণ করবেন না। সংগঠনের এক সদস্য বলেন, তাঁদের ‘সরকারের পাশে আছি’ বক্তব্যটি ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তিনি স্পষ্ট করে দেন যে সংগঠনের তরফ থেকে এই মুহূর্তে কেউ ফর্ম পূরণ করছেন না, কারণ এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ২০১৬ সালের আইনের ভিত্তিতে তৈরি নয়।
ইতিমধ্যেই এই নিয়োগ ঘিরে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ আরও বিস্তৃত আন্দোলনে নেমেছেন। তাঁদের প্রধান দাবি হলো, আদালতের রিভিউ ও কিউরেটিভ পিটিশন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। এছাড়া, যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ, ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ সামনে আনা, এবং পুনরায় প্যানেল তৈরি করে যাচাই সাপেক্ষে যোগ্যদের নাম প্রকাশ করার দাবিও তুলেছেন তাঁরা। এই দাবিগুলো সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সেন্ট্রাল পার্ক সংলগ্ন এলাকায় চাকরিপ্রার্থীরা অনশনে বসেছেন। প্রথম পর্যায়ে অনশনে বসা ১০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ইতিমধ্যেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, কিন্তু আন্দোলন থেমে থাকেনি। নতুন করে আরও পাঁচ জন শিক্ষক অনশনে বসেছেন। একজন আন্দোলনকারী বলেন, তাঁরা দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিতে চাইছেন না এবং সরকারের এই জোরজবরদস্তি একপ্রকার স্বৈরাচার। তিনি আরও জানান যে মঞ্চের কেউ ফর্ম পূরণ করছেন না।
এই পরিস্থিতি একদিকে যেমন কমিশনের অব্যবস্থা তুলে ধরছে, তেমনই অন্যদিকে ‘যোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের দৃঢ় অবস্থান সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এই অচলাবস্থা কতদিন চলবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।