১২০০ টাকার ঘর ৪৫০০! জগন্নাথ মন্দিরের আড়ালে ‘ভাড়া-বিস্ফোরণ’, দিঘার হোটেল নিয়ে কড়া ‘অ্যাকশন’

অক্ষয় তৃতীয়ার দিন দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির উন্মোচিত হওয়ার পর থেকেই সৈকত শহর পর্যটকদের ভিড়ে টইটম্বুর। এক নতুন ধর্মীয় আকর্ষণ হিসেবে এই মন্দির বহু মানুষের কাছে টেনে আনছে, যা দিঘার পর্যটন শিল্পে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। তবে এই বিপুল জনসমাগমের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু হোটেল মালিক ও পরিবহন চালক বাড়তি মুনাফার লোভে পর্যটকদের পকেট কাটছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই লাগামছাড়া ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে পৌঁছানোর পর নেওয়া হয়েছে কড়া পদক্ষেপ।

পর্যটকদের ভিড়, হোটেল মালিকদের ‘সুযোগ’
এমনিতেই সারা বছর দিঘায় পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে। জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের পর এই ভিড় যেন বহুগুণ বেড়ে গেছে। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে লক্ষাধিক পর্যটক ও পুণ্যার্থী দিঘায় আসছেন, আর সপ্তাহান্ত বা ছুটির দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়ে। এই পরিস্থিতিতে, হোটেল মালিকদের একাংশ নির্বিচারে কক্ষ ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যে ঘরগুলির ভাড়া কয়েক মাস আগেও ১২০০ টাকা ছিল, এখন সেগুলি ৪০০০-৪৫০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে!

কেবল হোটেল নয়, টোটোতেও ‘ভাড়া-ছাপ্পর’!
শুধু হোটেল ভাড়াই নয়, ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘার মধ্যে চলাচলকারী টোটোগুলিও এক ধাক্কায় ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে যেখানে ২০ টাকা নেওয়া হত, সেখানে এখন ১০০ টাকা দাবি করা হচ্ছে। রাস্তার ধারের খাবারের দোকানের দামও বেড়েছে বলে অভিযোগ। পর্যটকরা, যারা মন্দির দর্শন ও দিঘার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন, তারা এই অনৈতিক ভাড়া বৃদ্ধিতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ।

মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি: প্রশাসনের তৎপরতা শুরু
এই অভিযোগগুলি মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছানোর পর তিনি নবান্নের বৈঠকে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি পেয়েই প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। প্রশাসনের কর্তারা দ্রুত হোটেল মালিক সংগঠনের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, সকল হোটেলে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা সুস্পষ্টভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এর বাইরে কোনো অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে না।

প্রশাসনের তরফ থেকে আরও জানানো হয়েছে, এখন থেকে এই বিষয়ে নিয়মিত নজরদারি চলবে। যদি কোনও হোটেল বা পরিবহন চালকের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ার অভিযোগ আসে, তাহলে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

দিঘার রথযাত্রা: নতুন শুরুর প্রত্যাশা
উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসে অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্য তিথিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোন্মোচন করেছিলেন। এই বছর প্রথমবার দিঘায় মহাসমারোহে রথযাত্রা পালিত হবে। আপাতত সেই নিয়েই জোর প্রস্তুতি চলছে। আশা করা হচ্ছে, এই নতুন মন্দির এবং আসন্ন রথযাত্রা দিঘাকে এক নতুন পরিচিতি দেবে। তবে এর সঙ্গে যাতে পর্যটকদের হয়রানি না হয়, সেই দিকেও প্রশাসনকে কড়া নজর রাখতে হবে।