
এই বছর রথযাত্রা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক ভিন্ন উন্মাদনা, যার পরতে পরতে মিশে আছে রাজনৈতিক কৌশল এবং জনমুখী বার্তা। প্রতি বছর মাহেশের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রার সূচনা করে এলেও, এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পাখির চোখ দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের দিকে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, দিঘার এই প্রথম রথযাত্রা ঘিরে রাজ্য জুড়ে তৈরি হয়েছে এক অভূতপূর্ব আগ্রহ, যা ছাপিয়ে গেছে অন্যান্য সব আয়োজনকে। তবে কেবল দিঘা নয়, মুখ্যমন্ত্রী এবার নির্দেশ দিয়েছেন প্রত্যেক বিধায়ককে নিজ নিজ এলাকায় মহাসমারোহে রথযাত্রা উদযাপনের।
মুখ্যমন্ত্রীর ‘রথ-নির্দেশ’ : জনমানসে মিশে যাওয়ার কৌশল?
সোমবার বিধানসভায় মন্ত্রিসভার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক যুগান্তকারী নির্দেশ দেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, রথযাত্রার দিন প্রত্যেক বিধায়ককে নিজ নিজ বিধানসভা এলাকায় উপস্থিত থাকতে হবে এবং নিজেদের এলাকায় রথযাত্রা পালনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই নির্দেশিকার পেছনের কারণ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। কেউ কেউ মনে করছেন, এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের জন-সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে এবং রাজ্য জুড়ে একটি ইতিবাচক বার্তা যাবে।
দিঘায় জগন্নাথের মাসির বাড়ি : এক নতুন তীর্থক্ষেত্রের উন্মোচন?
দিঘায় প্রথম বারের মতো আয়োজিত হচ্ছে এই রথযাত্রা, যেখানে প্রভু জগন্নাথদেব, বলরাম এবং সুভদ্রার রথ বেরোবে। প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। মন্দির থেকে বেরিয়ে জগন্নাথদেবের রথ যাবে তাঁর মাসির বাড়ি, আর সেই এলাকাতেও চলছে সাজো সাজো রব। রথযাত্রার দিন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং দিঘায় উপস্থিত থাকবেন এবং রথের দড়ি টেনে যাত্রার শুভ সূচনা করবেন বলে জানা গিয়েছে।
মন্দিরের দুপাশের রাস্তার ধারে ব্যারিকেড করা হবে, যেখানে সাধারণ মানুষ উপস্থিত থাকবেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, রথের রশি যাতে সবাই ছুঁতে পারে, সেই বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে সাধারণ ভক্তদের মধ্যে এক অন্যরকম উন্মাদনা তৈরি করবে।
রথযাত্রায় ভিআইপিদের সমাবেশ : দিঘায় মন্ত্রীদের আনাগোনা
রথযাত্রার দিনে দিঘায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও একাধিক হেভিওয়েট মন্ত্রীর উপস্থিতি দেখা যেতে পারে। মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ইন্দ্রনীল সেন, অরূপ রায়, সুজিত বসুসহ আরও অনেকে উপস্থিত থাকতে পারেন। অন্যদিকে, উল্টো রথের সময়ও মন্ত্রী ও বিধায়কদের একটি বড় অংশ দিঘায় যেতে পারেন বলে খবর। এটি দিঘাকে কেবল একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ফ্রেমবন্দি জগন্নাথ : নবান্ন থেকে বিধানসভা
এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে এক বিশেষ মুহূর্তের সাক্ষী থাকল বিধানসভা। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘার জগন্নাথদেবের মন্দির এবং জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রার ফ্রেমবন্দি ছবি মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ছবিটি তিনি নবান্নে রাখবেন। একই সঙ্গে তিনি বিধানসভায় এবং সব বিধায়কদেরও এই ছবিটি নিজ নিজ অফিসে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি এক অর্থে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রতি রাজ্য সরকারের বিশেষ মনোযোগের প্রতীকী প্রকাশ।
সামগ্রিকভাবে, এবারের রথযাত্রা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, এর সঙ্গে মিশে গেছে এক নতুন রাজনৈতিক মাত্রা। দিঘার রথের রশি হয়তো এবার এক নতুন ইতিহাসের সূচনা করবে, যা রাজ্য রাজনীতির সঙ্গে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় আবেগকে এক সুতোয় বাঁধবে।