
পশ্চিম এশিয়ার রণাঙ্গনে আগুন জ্বলছে। ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে ছায়াযুদ্ধ এখন প্রকাশ্যে সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। এই উত্তেজনার পারদের মধ্যেই এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তাঁর দাবি, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে হত্যা করা হলেই নাকি এই সংঘাতের অবসান হবে। এক কথায়, পশ্চিম এশিয়ার জটিল ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে এক নতুন এবং বিপজ্জনক মাত্রা যোগ করলেন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহুর বিস্ফোরক উক্তি: এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুর কণ্ঠস্বর ছিল দৃঢ়, তাঁর অভিযোগের তীর সরাসরি তেহরানের দিকে। তিনি বলেন, “ইরান পশ্চিম এশিয়ার মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে রেখেছে। প্রায় ৫০ বছর ধরে উত্তেজনা ছড়িয়ে রেখেছে। সৌদি আরবের আরামকোয় তৈল ক্ষেত্রে বোমা ফেলেছে। সর্বত্র সন্ত্রাস এবং নাশকতা ছড়িয়ে যাচ্ছে। তেহরান আসলে চিরকালের জন্যই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়। পরিস্থিতিকে পরমাণু যুদ্ধের দোরগোড়ায় এনে দাঁড় করিয়েছে ইরান।” এই মন্তব্যগুলি ইরানকে চরম আগ্রাসী শক্তি হিসেবে উপস্থাপিত করে, যারা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
গুপ্তহত্যার ফিসফাস, ট্রাম্পের অস্বীকৃতি: প্রশ্ন ওঠে, এই বিস্ফোরক দাবির উৎস কী? অতীতে আমেরিকার আধিকারিকেরা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন যে, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে হত্যার ছক কষেছিল ইজরায়েল। মার্কিন আধিকারিকেরা আরও দাবি করেছিলেন যে, ইজরায়েল আমেরিকাকে জানিয়েছিল, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে হত্যার সুযোগ তাদের হাতে এসেছিল। তবে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিষয়টি সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই পুরনো জল্পনা যখন নেতানিয়াহুর সামনে আসে, তিনি বলেন, “এমন হলে সংঘর্ষ আর বৃদ্ধি পাবে না, বন্ধ হয়ে যাবে।” তাঁর এই মন্তব্যটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি সরাসরি খামেনেইকে লক্ষ্যবস্তু করার ধারণাকে আরও জোরালো করে।
ধোঁয়াশা ও প্রচ্ছন্ন হুমকি: কিন্তু সত্যিই কি ইরানের সুপ্রিমলিডারকে হত্যার পরিকল্পনা ইজরায়েল ছকে ফেলেছে? সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি নেতানিয়াহু। বরং তাঁর উত্তর ছিল ধোঁয়াশাপূর্ণ এবং প্রচ্ছন্ন হুমকিপূর্ণ। তিনি বলেন, “ইজরায়েলের যা করণীয়, তা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না।” এই কৌশলী জবাব একদিকে যেমন জল্পনাকে আরও উসকে দেয়, তেমনই অন্যদিকে ইজরায়েলের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ সম্পর্কে এক অনিশ্চয়তা তৈরি করে।
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তাপ ও পারমাণবিক আশঙ্কায়: গত শুক্রবার ইরানের পরমাণুকেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্য করে ইজরায়েলি সেনার হামলার পর থেকেই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। ইরানও এর প্রত্যাঘাত করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। যদিও সামরিক সংঘাত এখনও দুই দেশের মধ্যেই সীমিত, তবে পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে পশ্চিম এশিয়ায় অন্যত্রও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এমন এক পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর এই ‘খোমেনি নিধন’ তত্ত্ব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য কতটা মঙ্গলজনক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আন্তর্জাতিক মহলে। এক ধর্মীয় নেতাকে হত্যার হুমকি কি সত্যিই সংঘাতের অবসান ঘটাবে, নাকি তা আরও ব্যাপক ও ভয়াবহ যুদ্ধের সূচনা করবে, সেই প্রশ্নই এখন মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে ঘুরপাক খাচ্ছে।