
দেশের শেষ জনগণনা হয়েছিল ২০১১ সালে, দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০২৭ সালে ফের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। এর আগে আসন্ন জনগণনার প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে রবিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রসচিব গোবিন্দ মোহন এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই জনগণনা একদিকে যেমন দেশের বৃহত্তম তথ্যভাণ্ডার তৈরি করবে, তেমনই এর ডিজিটাল পদ্ধতি এবং তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে বেশ কিছু নতুন চ্যালেঞ্জও সামনে এনেছে।
এবার জনগণনার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। সরকারি কর্মীরা মোবাইল ডিভাইসের অ্যাপ ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং সেই তথ্য সরাসরি দিল্লির মান সিং রোডে অবস্থিত ‘জনগণনা ভবন’-এর সেন্ট্রাল সার্ভারে আপলোড করা হবে। এই ডিজিটাল পদ্ধতির সুবিধা থাকলেও, তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে – কোনোভাবে এই ডেটা ‘লিক’ হয়ে যাবে না তো? বর্তমান সময়ে খোলা বাজারে মানুষের ‘গোপন’ তথ্য বিক্রি হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, তাই কেন্দ্রের আশঙ্কা, জনগণের অত্যন্ত ব্যক্তিগত তথ্য পাচারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই ডেটা সুরক্ষিত রাখতে দফায় দফায় বৈঠক শুরু হয়েছে। চ্যালেঞ্জ একটাই – ‘গোপন’ তথ্য সুরক্ষিত রাখা।
আজ, সোমবার, জনগণনা সংক্রান্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। ২০২৬ সালে শুরু হয়ে দুই পর্বে সেন্সাসের কাজ শেষ হবে ২০২৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর যাবতীয় তথ্য পর্যালোচনার পর রিপোর্ট প্রকাশ হবে ওই বছরের মার্চ মাসের পর। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আগামীকাল মঙ্গলবার কমিশনারকে ডেকেছেন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিবও। লক্ষ্য হলো, ডিজিটাল ভারতে সেন্সাসকে ডিজিটালি সুরক্ষিত রাখা এবং অবশ্যই তথ্যের নির্ভুলতা যাচাই করা। কোনোভাবেই যেন ভুল তথ্য সার্ভারে না ওঠে।
উদাহরণস্বরূপ, বাবার বয়স ৪০ আর ছেলের ২২, কিংবা পরিবারের তিনজন হিন্দু ও একজন খ্রিস্টান – এমন কোনো অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক তথ্য মিললেই কেন্দ্রীয় স্তরে স্ক্রুটিনির পর সেই পরিবারের কাছে ফের যাচাইয়ে যাবেন জনগণনা কর্মীরা। তাঁরা খতিয়ে দেখবেন, কোনো ভুল তথ্য নেওয়া হয়েছে কিনা, যেমন – পালক পিতার কাছে থাকেন কিনা, বা ধর্ম পরিবর্তন হয়েছে কিনা। সবটাই যাচাই করা হবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এবার জনগণনার নথিতে ‘অন্যান্য’ (আদার্স) ক্যাটাগরির পাশাপাশি সাধারণের নির্দিষ্ট জাতি বা কাস্ট যুক্ত হবে। হিন্দু, শিখ এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাই কেবল তফসিলি জাতিভুক্ত হন, তবে উপজাতি যে কোনো ধর্মাবলম্বীই হতে পারেন। সরকার ধন্দে আছে, ‘অন্য’দের মধ্যে যদি কেউ জাতি জানাতে না চান, তাহলে সেই ঘর ফাঁকা রাখা হবে কিনা।
রবিবার এক্স হ্যান্ডেলে জনগণনা প্রস্তুতি বৈঠকের ছবি দিয়ে অমিত শাহ জানিয়েছেন, “১৬তম জনগণনার প্রস্তুতি বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। এই প্রথম আদমশুমারিতে জাতিগণনাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৩৪ লক্ষেরও বেশি গণনাকারী এবং তত্ত্বাবধায়ক এবং প্রায় ১.৩ লক্ষ আদমশুমারি কর্মী অত্যাধুনিক মোবাইল, ডিজিটাল গ্যাজেট ব্যবহার করে এই কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।” যদিও এই বৃহৎ কার্যক্রমের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে, জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা কতটা নিশ্চিত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।