
মালদার কালিয়াচকে ফের প্রকাশ্যে এল শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল ও তোলাবাজির ভয়াবহ চিত্র। ৫ লক্ষ টাকা তোলা না দেওয়ায় কালিয়াচক ১ নং ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি মহম্মদ সারিউল শেখের বিরুদ্ধে বাড়ি ভাঙচুর, মারধর এবং আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তাণ্ডব চালানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন।
কয়েকদিন ধরে কালিয়াচক থানার দক্ষিণ লক্ষ্মীপুর এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে এলাকা দখল নিয়ে তীব্র বিবাদ চলছিল। অভিযোগের তির সরাসরি তৃণমূল ব্লক সভাপতি মহম্মদ সারিউল শেখের দিকে। জানা গেছে, সারিউলের শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা তৃণমূল থেকে জয়ী হলেও বর্তমানে তারা কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। এই বিষয়টি নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। অভিযোগ উঠেছে, এই বিবাদের মীমাংসার জন্য ব্লক সভাপতি সারিউল ৫ লক্ষ টাকা তোলা দাবি করেন। অপর পক্ষ এই টাকা দিতে অস্বীকার করে এবং বিষয়টি জেলা নেতৃত্বের কাছে জানায়। এমনকি, স্থানীয় বিধায়ক আব্দুল গনিও রাজ্য নেতৃত্বকে জানান যে, ব্লক সভাপতি সারিউল কংগ্রেস দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।
টাকা না পেয়ে এবং জেলা নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানানোর পরই সারিউল শেখ এলাকার দুষ্কৃতীদের নিয়ে তাণ্ডব চালান বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। অভিযোগকারীরা জানান, ঘটনার সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল এবং বাড়ি ভাঙচুর করে। এমনকি মহিলাদেরও মারধর করা হয়েছে বলে খবর। এই তাণ্ডবের একটি সিসিটিভি ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর দাবি, ঘটনার সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দুষ্কৃতীদের প্রকাশ্যে তাণ্ডব চালানো সত্ত্বেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সামাজিক মাধ্যমে দুষ্কৃতীদের ছবি প্রকাশ্যে এলেও তারা এখনও অধরা। এই ঘটনায় এলাকাবাসী চরম আতঙ্কে রয়েছেন এবং নিজেদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে পুলিশ সুপারকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
যদিও কালিয়াচক ১ নং ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি মহম্মদ সারিউল শেখ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর সাফাই, গ্রামবাসীরা মিথ্যা কথা বলছেন এবং এটি বিরোধীদের চক্রান্ত। তিনি বলেন, “বিষয়টি প্রশাসন দেখছে।”
মালদহ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি শুভময় বসু এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই ধরনের লুটপাট বা বিবাদ যারা চালাচ্ছে, সে আমাদের দলেরই হোক বা বিরোধী দলের হোক, পুলিশকে বলব ব্যবস্থা নিক।” এই মন্তব্য তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির দক্ষিণ মালদার সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি। তিনি বলেন, “জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। বছরের শুরুতে তৃণমূল নেতাকে জানে শেষ করার ঘটনার পর একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। তারপরও পুলিশ চুপ। তৃণমূল করে বলে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”
এই ঘটনা মালদার আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং শাসকদলের অভ্যন্তরীণ বিবাদকে পুনরায় সামনে নিয়ে এলো। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা এখন ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়।