ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান পাকিস্তানে, ইরানের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের ঘোষণা

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান ভয়াবহ হামলা-পাল্টা হামলার আবহে এবার তেহরানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে পাকিস্তান। শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য বিশ্বের সকল মুসলিম দেশকে জোরালো আহ্বান জানিয়েছে ইসলামাবাদ। এই সংঘাত এখন কেবল দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করছে।

শনিবার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমরা ইরানের পাশে আছি এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমর্থন জানাবো।” তিনি ইসরায়েলের আগ্রাসী নীতির সমালোচনা করে বলেন, “ইসরায়েল, ইয়েমেন এবং ফিলিস্তিনকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। যদি মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এখন ঐক্যবদ্ধ না হয়, তাহলে প্রত্যেককেই একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।”

কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান, OIC-এর জরুরি বৈঠক চেয়ে প্রস্তাব
খাজা আসিফ এখানেই থেমে থাকেননি। বিশ্বের সকল মুসলিম দেশকে অবিলম্বে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে, ইসরায়েল ইস্যুতে একটি যৌথ কৌশল নির্ধারণে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (OIC)-কে জরুরি বৈঠকে বসার প্রস্তাব দিয়েছেন পাকিস্তানের এই শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী। তার এই আহ্বান মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েল-বিরোধী একটি বৃহত্তর জোট গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও জোর দিয়ে বলেন, ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং ইসলামাবাদ “এই কঠিন সময়ে তেহরানের পাশে রয়েছে।” দুই দেশের মধ্যে ৭৫০ কিলোমিটার (৪৬৬ মাইল) দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যা তাদের কৌশলগত গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

এদিকে, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ইরানি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের হামলাকে “ইরানের সার্বভৌমত্বের নগ্ন লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছেন। তার এই মন্তব্য পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ইরানের প্রতি দৃঢ় সমর্থনেরই প্রতিফলন।

হামলা-পাল্টা হামলা: রক্তক্ষয়ী সংঘাতের চিত্র
সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় গত শুক্রবার, যখন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তেহরানের বিভিন্ন আবাসিক ভবন, সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এই হামলায় ইরানে প্রায় ১০০ জন বেসামরিক নাগরিক, সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন বলে খবর।

এর জবাবে ইরানও দ্রুত পাল্টা আঘাত হানে। ইসরায়েলি ভূখণ্ডে সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে পাঁচ ধাপে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে ইরান। ইরানের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তাদের হামলায় ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৫০টিরও বেশি সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনা ধ্বংস কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শনিবারও দ্বিতীয় দিনের মতো ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে ইরান। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ইরানের হামলা জোরদার করা হতে পারে।

এই সংঘাতের জেরে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। পাকিস্তানের এই প্রকাশ্য সমর্থন এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতি ঐক্যের আহ্বান পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy