কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে একজন মহিলা চিকিৎসকের উপর হওয়া নির্মম অত্যাচার এবং মহারাষ্ট্রের বদলাপুরে স্কুলছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের ঘটনা সমগ্র দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই ধরনের ঘটনা সভ্য সমাজের জন্য এক বিরাট কলঙ্ক।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতে ধর্ষণকে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। গরুড় পুরাণ, নারদ পুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের মতো পুরাণগুলিতে এই অপরাধের জন্য অত্যন্ত কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এই শাস্তিগুলি প্রায়শই নরকের ভয়াবহ দৃশ্যের মধ্য দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, গরুড় পুরাণে বলা হয়েছে যে, ধর্ষণকারীকে তামার মূর্তিকে আলিঙ্গন করতে হবে এবং জাহান্নামে কঠিন যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে।
যদিও পুরাণগুলিতে ধর্ষণের জন্য কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে, আধুনিক সমাজে আমাদের এই বিষয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। এই শাস্তিগুলি প্রাচীন কালের সামাজিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিফলন। আজকের দিনে, আমাদের আইন এবং নৈতিকতা এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে।
গরুড় পুরাণের একটি শ্লোকে ধর্ষণকারী ব্যক্তির জন্য যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তা আত্মাকে নাড়া দেয়। বিশেষ কথা হল, পাপী শুধু পৃথিবীতে বেঁচে থাকতেই এই শাস্তি পায় না, পাপীকেও এই শাস্তি ভোগ করতে হয় জাহান্নামে।
ताम्रायसि स्त्रीरूपेण संसक्तो यस्य पापवान्।
नरके पच्यते घोरे यावच्चन्द्रदिवाकरौ॥
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি ধর্ষণ করে তার শাস্তি খুবই কঠিন। তাকে তামার (গরম লোহা) তৈরি একটি মহিলার মূর্তিকে আলিঙ্গন করতে হবে এবং তারপরে এইভাবে তার জীবন ত্যাগ করতে হবে। যতক্ষণ সূর্য ও চন্দ্র থাকবে ততদিন তার দেহ থেকে যে আত্মা বের হবে সে কঠিন নরক ভোগ করবে।’
মহাভারত, ভারতীয় সংস্কৃতির একটি স্তম্ভ, ধর্ম, নৈতিকতা এবং সামাজিক ব্যবস্থার উপর বিস্তারিত আলোকপাত করে। এই মহাকাব্যে অনৈতিক যৌন আচরণকে, বিশেষ করে ব্যভিচারকে, একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মহাভারতের মতে, এই ধরনের অপরাধ শুধু ব্যক্তিকে নয়, সমগ্র সমাজকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
শান্তি পর্বের একটি শ্লোকে এই বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য উঠে এসেছে:न चावमन्येत कदाचिदर्थान् धर्मार्थान् कामान् न हरेन मूढः।धर्मेण यस्यैव सपत्नमिच्छेद्व्यभिचारिणं तं निहन्याच्च राज्ञः॥
অর্থাৎ, “ধর্ম, অর্থ এবং কামকে কখনো অসম্মান করা উচিত নয়। যে ব্যক্তি ধর্মের বিরুদ্ধে যায় এবং ব্যভিচার করে, তাকে রাজা শাস্তি দিতে পারে।”
