“শেষকৃত্যেও এসেছিল সোনমের প্রেমিক”-দাবি করলেন নিহত রাজার মা ও বোন

মেঘালয়ে নবদম্পতির হানিমুন পরিণত হয়েছে এক লোমহর্ষক হত্যা রহস্যে, যার পরতে পরতে উন্মোচিত হচ্ছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। রাজা রঘুবংশী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত স্ত্রী সোনমের প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা শুধু খুনের ছকেই জড়িত ছিলেন না, বরং নিহত রাজার শেষকৃত্যেও পরিবারের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যেই হাজির ছিলেন বলে তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে। এই অপ্রত্যাশিত উপস্থিতি এবং খুনের পর গা-ঢাকা না দিয়ে স্বাভাবিক আচরণ করার বিষয়টি তদন্তকারীদের নতুন করে ভাবাচ্ছে।
ইন্দোরের ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশী গত ১১ মে সোনমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর গত ২০ মে মেঘালয়ে হানিমুনে যান এই নবদম্পতি। কিন্তু ২৩ তারিখ থেকে তাদের হঠাৎ খোঁজ মিলছিল না। দম্পতির নিখোঁজ হওয়ার খবরে তোলপাড় শুরু হয়। বিশেষ তদন্তকারী দল খোঁজাখুঁজি শুরু করলে ২ জুন ওয়েইসাওডং জলপ্রপাতের কাছে একটি গিরিখাতে মেলে রাজার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। তখনও সোনমের কোনো সন্ধান ছিল না।
দীর্ঘ ১৭ দিন ধরে বেপাত্তা থাকার পর অবশেষে রবিবার উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর থেকে নববধূ সোনম রঘুবংশীর খোঁজ মিলতেই মেঘালয় হানিমুন কেসের রহস্যের জট খুলতে শুরু করে। পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে এক ভয়ানক সত্য: ‘ভিক্টিম’ নয়, খোদ ‘ভিলেন’ ছিলেন স্ত্রী সোনম। প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রেমিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মেঘালয়ে হানিমুনে গিয়ে স্বামী রাজা রঘুবংশীকে হত্যার ছক কষেছিলেন সোনম। এই কাজে ভাড়াটে খুনিও ব্যবহার করা হয়েছিল।
রবিবার সোনমের খোঁজ মেলার পরই একে একে পুলিশের জালে ধরা পড়েন সোনমের প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা এবং খুনে অভিযুক্ত অন্যান্যরাও। রাজা রঘুবংশীর খুনের অভিযোগে সোনমের গ্রেফতার হওয়া রাজার শ্বশুরবাড়ির লোকের কাছে ছিল এক চরম ধাক্কা। কিন্তু এখানেই শেষ নয়; নববধূ সোনমের পুরোনো প্রেমের সম্পর্ক এবং প্রেমিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে খুনের পরিকল্পনার তথ্য রঘুবংশী পরিবারকে স্তম্ভিত করে দেয়।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্যটি উঠে আসে যখন রাজ কুশওয়াহার নাম ও ছবি দেখার পর রাজা রঘুবংশীর মা ও বোন দাবি করেন যে, রাজার শেষকৃত্যেও হাজির ছিলেন রাজ কুশওয়াহা। রাজার বোনের দেওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সোনমের বাবা দেবী সিংয়ের সঙ্গে শেষকৃত্যের দিন তাদের বাড়ি এসেছিলেন রাজ কুশওয়াহা। এমনকি রাজার মৃতদেহ দেখে শোকে ভেঙে পড়া সোনমের বাবাকে সান্ত্বনা দিতেও দেখা যায় তাকে!
শেষকৃত্যে আসা দুই পরিবারের আত্মীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানিয়েছেন যে, শেষকৃত্যের দিন পুরো সময়ই সেখানে ছিলেন সোনমের প্রেমিক রাজ কুশাওয়াহা। জানা গেছে, রাজার শেষকৃত্যে যোগদানের জন্য আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে সোনমের বাড়ি থেকে চার-পাঁচটি গাড়ি এসেছিল, যার মধ্যে একটি গাড়ি চালিয়ে নিয়ে এসেছিলেন রাজা রঘুবংশী খুনে মূল অভিযুক্ত রাজ।
এর আগেই রাজা রঘুবংশীর ভাই বিপুল রাজবংশী জানিয়েছিলেন যে, রাজ সোনমের বাবার কর্মচারী এবং সোনমের পারিবারিক সানমাইকা শিটসের ওয়ারহাউসে কাজ করতেন। খুনের পর গা-ঢাকা না দিয়ে পরিবারের পাশে থেকে তদন্তের মোড় কোন দিকে ঘুরছে তা জানাই কি ছিল রাজের উদ্দেশ্য? নাকি নিজের উপর থেকে সন্দেহ সরাতেই স্বাভাবিক আচরণ করে এসেছে সে? এই প্রশ্নগুলি এখন তদন্তকারীদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
রাজা রঘুবংশী খুনে সোনমের সঙ্গেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তার প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা। তদন্তকারীদের দাবি, সোনমের স্বামীকে খুনের জন্য ভাড়াটে খুনিদের ব্যবস্থা করেছিল সেই। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে এবং আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।