২০২৬ সালে কী টার্গেট? তামিলনাড়ু থেকে বাংলা নিয়েও বড় বার্তা দিলেন অমিত শাহ

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ু – এই দুটি রাজ্যে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। রবিবার তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে এক কর্মীসভা থেকে এই দ্বিমুখী লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি তামিলনাড়ুর শাসক দল ডিএমকে-কে (DMK) দুর্নীতি ইস্যুতে কড়া ভাষায় আক্রমণ করার পাশাপাশি বাংলায় বিজেপির ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের বিষয়েও আত্মবিশ্বাসের সুর চড়ান।

চলতি মাসের শুরুতেই পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে অমিত শাহ বাংলার কর্মীদের জন্য ২০২৬-এর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিয়েছিলেন। নেতাজি ইন্ডোরের সভায় তিনি বলেন, “২০১৭ সালের নির্বাচনের পর আমরা ২০১৯-এর লোকসভার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ৭৭টি আসন জিতি। এরপর ২০২৪-এর লোকসভায় ৯৭টি বিধানসভা আসনে বিজেপি এগিয়ে ছিল। আমরা ১৪৩টি আসনে ৪০%-এর বেশি ভোট পেয়েছি। আর একটুই বাকি আছে! এগোলেই পরের নির্বাচনে আমাদের সরকার তৈরি হবে।”

তিনি দৃঢ়তার সাথে জানান যে, বাংলায় ২০২৬ সালে বিজেপি সরকার গঠন করবে। সেই সাথে শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারের প্রতি তাঁর পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলেও স্পষ্ট করে দেন।

মাদুরাইয়ের সভা থেকে অমিত শাহ তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের ঝড় তোলেন। তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ৪৫০ কোটি টাকার পুষ্টি কিট প্রকল্প একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, যা এক বড় আর্থিক দুর্নীতি। এর ফলে বহু গরিব মানুষ প্রকৃত পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও তাঁর অভিযোগ।

শাহ আরও অভিযোগ করেন যে, ডিএমকে সরকার ৪,৬০০ কোটি টাকার বালি কেলেঙ্কারি করেছে, যার ফলে রাজ্যের মানুষকে অতিরিক্ত দামে বালি কিনতে হচ্ছে। তিনি ‘তাসমাক কেলেঙ্কারি’-র প্রসঙ্গও তোলেন এবং দাবি করেন যে এই দুর্নীতিতে রাজ্যের রাজস্ব থেকে ৩৯,০০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে, যা দিয়ে প্রতিটি স্কুলে দুটি করে নতুন ক্লাসরুম তৈরি করা যেত। গত মাসেই সুপ্রিম কোর্ট অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের আওতাধীন এই মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের পদক্ষেপে স্থগিতাদেশ দিয়েছে, যেখানে তামিলনাড়ু সরকার কেন্দ্রীয় সংস্থার ক্ষমতা অতিক্রম এবং সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিল।

শাহ বলেন, “ডিএমকে সরকারের কেলেঙ্কারির তালিকা অনেক বড়, কিন্তু সবটা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না।” তিনি গত বছরের কল্লাকুরিচি বিষ মদ ট্র্যাজেডির কথাও স্মরণ করিয়ে দেন এবং দাবি করেন যে এই ভয়াবহ ঘটনায় ৬০-এরও বেশি মানুষের মৃত্যুর পিছনে সরকারের দুর্নীতিই দায়ী।

বিজেপির সাম্প্রতিক সাফল্যকে হাতিয়ার করে অমিত শাহ বলেন, ওড়িশা, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও দিল্লিতে বিজেপির সাফল্যের পর এবার তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গেও তারা সরকার গঠন করবে। তিনি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন, “বিজেপি-এআইএডিএমকে জোট আগামী বছর তামিলনাড়ুতে সরকার গঠন করবে। আমি মানুষের মনের কথা বুঝি। ডিএমকে-কে মানুষ ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে।”

শাহ আরও অভিযোগ করেন যে, স্টালিন সরকার তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ৬০ শতাংশ পূরণ করতে পারেনি। তিনি স্টালিনের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, “স্টালিনজী, সাহস থাকলে বলুন, আপনার ইশতেহারের কতটা প্রতিশ্রুতি আপনি পূরণ করেছেন?”

অমিত শাহ এদিন অপারেশন সিঁদুরের প্রসঙ্গও তোলেন। তিনি মনে করিয়ে দেন ২০১৬-র উরি মিশন, ২০১৯-এর পুলওয়ামা এবং এপ্রিলের পহেলগাঁও হামলার কথা। তিনি বলেন, এই সমস্ত হামলার পাল্টা জবাবে প্রধানমন্ত্রী মোদীই দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে শত্রুপক্ষের ঘরে ঢুকে প্রত্যাঘাত করেছেন।