
ইউক্রেনের সুপরিকল্পিত ‘স্পাইডার্স ওয়েব’ ড্রোন হামলায় রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ঘাঁটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর, ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী এবার ভয়াবহ পাল্টা আঘাত হানল। শুক্রবার রাতভর ইউক্রেনের একাধিক শহরে ড্রোন ও মিসাইল হামলায় অন্তত ৩ জন নিহত এবং ২১ জন আহত হয়েছেন। এই হামলায় ১৮টি বহুতল ধূলিসাৎ হয়ে গেছে, যা ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার তীব্র প্রতিশোধের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইউক্রেনের স্টেট এমার্জেন্সি সার্ভিস জানিয়েছে, শুক্রবার রাত থেকে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে ঝাঁকে ঝাঁকে রাশিয়ার ড্রোন উড়ে আসে, যা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়। জানা গেছে, রাশিয়ার সেনারা ৪০০-র বেশি ড্রোন এবং অন্তত ৪০টি মিসাইলের মাধ্যমে ইউক্রেনের ৯টি ভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় ৩ জন দমকলকর্মী, চেরনিহিভে এক ব্যক্তি এবং লুৎস্কের ২ নাগরিক নিহত হয়েছেন। একাধিক বহুতলে আঘাত হেনেছে রাশিয়ার পাঠানো হামলাকারী ড্রোন, যার ফলে আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে।
ইউক্রেন এয়ারফোর্স জানিয়েছে, রাশিয়া ৪০৭টি ড্রোন, ৬টি ব্যালিস্টিক মিসাইল, ৩৮টির বেশি ক্রুজ মিসাইল এবং একটি অ্যান্টি-রেডার মিসাইলের মাধ্যমে এই হামলা করেছে। ইউক্রেনের এয়ারফোর্স অবশ্য দাবি করেছে যে, মোট ৪৫২টি হামলার মধ্যে ৪০৬টি হামলা তারা রুখে দিতে সক্ষম হয়েছে।
‘স্পাইডার্স ওয়েব’-এর নেপথ্য কাহিনি:
সম্প্রতি ভলোদেমির জেলেনস্কির দেশ অতর্কিতে রাশিয়ার একের পর এক বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ইউক্রেনের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির গোপন এই অপারেশনে রাশিয়ার ৪১টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়ে যায় বলে দাবি করা হয়। আন্তর্জাতিক মহল এই হামলাকে ইউক্রেনের ‘দুঃসাহস’ হিসেবে দেখছিল।
ইউক্রেনের এক আধিকারিক জানান, এই অপারেশনের কোড নেম ছিল ‘স্পাইডার্স ওয়েব’। এই অপারেশনে রাশিয়ার ৪টি বিমান ঘাঁটিকে নিশানা করা হয়েছিল, যা ইউক্রেনের তরফে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা। ইউক্রেনের নিশানায় ছিল রাশিয়ার বেলায়া বিমান ঘাঁটি, যেখানে রাশিয়ার Tu-22M সুপারসনিক বোমারু যুদ্ধবিমান রয়েছে। এই বিমানগুলি সাধারণত ইউক্রেনের উপর হামলার জন্য পুতিনের সেনা ব্যবহার করে। ‘স্পাইডার্স ওয়েব’ অপারেশনে Tu-95 বিমান সহ একাধিক রুশ বোমারু বিমান ধ্বংস হতে দেখা যায়।
যুদ্ধের এই পাল্টাপাল্টি আঘাত দুই দেশের মধ্যে চলমান সংঘাতকে আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিল। এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন এই সংঘাতের পরবর্তী ধাপে।