আজকাল আমাদের ডিজিটাল জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ইমেইল অ্যাকাউন্ট। অনলাইন কেনাকাটা থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইমেইল অপরিহার্য। তাই পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া, বা অ্যাকাউন্ট চুরি/হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া মানে এক বিশাল বিপদ। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিলেই আপনি নিজের অ্যাকাউন্ট ফেরত পেতে পারেন এবং এর সঙ্গে যুক্ত ডজনখানেক গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্ট বাঁচাতে পারেন।

যখন বুঝবেন ইমেইল অ্যাকাউন্ট চুরি হয়েছে
যদি আপনি হঠাৎ করে আপনার ইমেইল অ্যাকাউন্টে লগইন করতে না পারেন অথবা অস্বাভাবিক কার্যকলাপ দেখতে পান, তাহলে বুঝবেন আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। এমন অবস্থায় দ্রুত নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিন:

দ্রুত পাসওয়ার্ড বদলান: যদি আপনার কোনো ডিভাইসে (যেমন ফোন, কম্পিউটার) আপনি আগে থেকেই লগইন করা থাকেন, তাহলে সেখান থেকে দ্রুত আপনার পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন।

পরিচিত ডিভাইস ও লোকেশন ব্যবহার করুন: অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করার সময়, আপনি আগে যেখান থেকে নিয়মিত ইমেইল ব্যবহার করতেন, যেমন আপনার বাড়ির ওয়াইফাই সংযুক্ত কম্পিউটার বা ফোন, সেই ডিভাইস ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করুন। এতে প্রোভাইডার আপনাকে দ্রুত শনাক্ত করতে পারবে।

প্রোভাইডারের অ্যাকাউন্ট রিকভারি প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন: গুগল, মাইক্রোসফট বা অন্যান্য ইমেইল প্রোভাইডারদের অ্যাকাউন্ট রিকভারি প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন। সাধারণত, বিকল্প ইমেইল আইডি বা ফোন নম্বর দিয়ে লগইন করার চেষ্টা করতে বলা হয়।

পুরনো পাসওয়ার্ড বা নিরাপত্তা প্রশ্নের উত্তর দিন: যদি আপনার পুরনো পাসওয়ার্ড বা সেট করা নিরাপত্তা প্রশ্নের উত্তর মনে থাকে, তবে তা লিখুন। পুরোটা মনে না থাকলেও যতটুকু মনে পড়ে, ততটুকু চেষ্টা করুন।

ধৈর্য ধরুন: অনেক সময় অ্যাকাউন্ট রিকভারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন এবং নিয়মিত আপনার অ্যাকাউন্টের অবস্থা পরীক্ষা করুন।

সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে: যদি সব চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং আপনি অ্যাকাউন্ট ফিরে না পান, তাহলে নতুন একটি ইমেইল অ্যাকাউন্ট খুলুন। এরপর ধাপে ধাপে আপনার সব গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্ট (যেমন সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন শপিং, ব্যাংক) নতুন ইমেইলে স্থানান্তর করুন।
যখন অ্যাকাউন্ট ফিরে পাবেন বা নতুন করে তৈরি করবেন
অ্যাকাউন্ট ফিরে পাওয়ার পর বা নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পর আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:

নতুন, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিন: আপনার পাসওয়ার্ড অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে। কমপক্ষে ১২ অক্ষরের একটি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, যেখানে বড় ও ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন থাকবে। এলোমেলো শব্দ, জনপ্রিয় গানের লাইন বা কোটেশন ব্যবহার করে সহজে মনে রাখার মতো কিন্তু শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারেন।

টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করুন: এটি আপনার অ্যাকাউন্টের সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসএমএস-এর পরিবর্তে কোড জেনারেটর অ্যাপ (যেমন গুগল অথেনটিকেটর) ব্যবহার করাই ভালো, কারণ এটি আরও সুরক্ষিত। ব্যাকআপ কোডগুলো একটি নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করুন।
পাসওয়ার্ডের পরিবর্তে ‘পাসকি’ ব্যবহার শুরু করুন: যদি আপনার ডিভাইস পাসকি (Passkey) সমর্থন করে, তাহলে এটি ব্যবহার করুন। আপনার ডিভাইস এবং বায়োমেট্রিক্সের মাধ্যমে লগইন হওয়ায় এটি পাসওয়ার্ডের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ।
রিকভারি ইমেইল ও ফোন নম্বর যুক্ত করুন: আপনার অ্যাকাউন্টে একটি রিকভারি ইমেইল এবং ফোন নম্বর যুক্ত করুন। এতে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হলে সহজেই আপনার অ্যাকাউন্ট ফেরত পেতে পারবেন।

নিরাপত্তা প্রশ্ন সেট করুন: যতটা সম্ভব নিরাপত্তা প্রশ্ন সেট করুন। উত্তরগুলো যেন অনুমান করা কঠিন হয় এবং সেগুলো কোথাও লিখে রাখুন নিরাপদ জায়গায়।
একটি ইমেইল অ্যাকাউন্ট হারানো মানে কেবল মেইল নয়, আপনার অনলাইন জীবনের নিয়ন্ত্রণ হারানো। তাই আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আর দেরি করবেন না।