
কামারহাটির নজরুল মঞ্চ বৃহস্পতিবার হয়ে উঠল এক নাটকীয় রাজনৈতিক ময়দান। তৃণমূল কংগ্রেসের এক কর্মিসভায় প্রবীণ বিধায়ক মদন মিত্রের অগ্নিশর্মা মেজাজ এবং কাউন্সিলরদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য আক্রমণ দলের অভ্যন্তরীণ ফাটলকে আরও স্পষ্ট করে তুলল। তাঁর বিস্ফোরক মন্তব্য শুধু সভাস্থলেই নয়, রাজ্য রাজনীতিতেও ঝড় তুলেছে।
মঞ্চে যখন অভিনেত্রী-বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক নির্মল ঘোষ-সহ অন্যান্য নেতৃত্ব উপস্থিত, তখনই কর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হন মদন মিত্র। তাঁর অভিযোগের তীর সরাসরি কাউন্সিলরদের দিকে। মদনের দাবি, বহু কাউন্সিলরই সভায় অনুপস্থিত ছিলেন, আর কেউ কেউ তো সায়ন্তিকার গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতার মাঝপথেই আসন ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন। এমনকি, কয়েকজন নাকি টানা পাঁচটি কর্মিসভাতেই গরহাজির ছিলেন!
এই চরম অসন্তোষের প্রকাশে মদন মিত্রের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে কিছু চাঁচাছোলা মন্তব্য। তিনি বলেন, “তৃণমূলের নাম আর কাউন্সিলর পদ সরিয়ে দিলে, এলাকায় কুকুরও আপনাদের কামড় দেবে। এখনই যদি তৃণমূলের জামাটা খুলে নেওয়া হয়, কী হবে তখন ভাবুন।” তাঁর এই মন্তব্য উপস্থিত কর্মীদের মধ্যে যেমন বিস্ময় সৃষ্টি করে, তেমনই দলীয় বৃত্তে তৈরি করে তীব্র অস্বস্তি। তিনি আরও যোগ করেন, “যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দেন যে কামারহাটিতে তৃণমূল নেই, তখন কী করবেন আপনারা?” এরপরেই একাধিক কাউন্সিলরকে তিনি ‘হরিদাস পাল’ বলেও তীব্র কটাক্ষ করেন, যা তাদের প্রতি তাঁর চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করে।
‘চাকরি বিক্রি করা সরকার’ বিতর্ক:
মদন মিত্রের আরও একটি মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোরদার তরজা। তিনি দাবি করেন, “এই কর্মিসভায় যাঁরা আছেন, তাঁদের ৪০ শতাংশই তৃণমূলের দেওয়া চাকরি করেন। যাঁরা চাকরি পাননি, তারা কী ভাবছে, সেটাও ভাবা দরকার।” এই মন্তব্যের পরপরই বিজেপি তৃণমূলকে ‘চাকরি বিক্রি করা সরকার’ বলে একহাত নিয়েছে। বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় কটাক্ষ করে বলেন, “ব্রাত্য বসুও আগে মেনে নিয়েছিলেন। একই কথা মদন মিত্র বললেন। বোঝাই যাচ্ছে, তৃণমূল মানে চাকরি বিক্রি করা সরকার। এবার নিজেদের লোকেরাই বলতে শুরু করেছেন। তৃণমূল যে চাকরিটা দিয়েছে সেটা স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে।”
তবে মদন মিত্র নিজের অবস্থানে অনড়। তিনি সাফ জানিয়েছেন, তাঁর বক্তব্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে কেউ অভিযোগ জানালে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। তবে এর পাশাপাশি, অভিযোগকারী নিজেই ওয়ার্ড অফিসে কতটা উপস্থিত থাকেন, সেই তথ্যটাও প্রকাশ্যে আনা উচিত বলে তিনি দাবি করেন।
মদন মিত্রের মতো একজন সিনিয়র নেতার এমন প্রকাশ্য ক্ষোভ এবং তীক্ষ্ণ মন্তব্য তৃণমূলের অন্দরমহলে তীব্র চর্চা শুরু করেছে। এটি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ এবং সম্ভাব্য দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই ঘটনা নিঃসন্দেহে আগামী দিনে তৃণমূলের জন্য আরও অস্বস্তি বাড়াবে।