অসুস্থ হয়ে ঘরে শুয়ে অনুব্রত! কাজলের সঙ্গে দেখা করতে হাজির অনুগামীরা, তবে কি খেলা ঘুরছে বীরভূমে?

বীরভূমের রাজনীতিতে নতুন করে শোরগোল। পুলিশকে গালিগালাজ করার অভিযোগ এবং পরবর্তীতে থানায় হাজিরা না দিয়ে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আপাতত গৃহবন্দি রয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য অনুব্রত মণ্ডল। আর অনুব্রত যখন ঘরে আটকে, ঠিক তখনই তৃণমূলের অপর কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখ স্বমহিমায় ফিরে এসেছেন। তাহলে কি বীরভূমের ক্ষমতার খেলা ঘুরছে? এই আবহে জানা যাচ্ছে, সাঁইথিয়ার বেশ কয়েকজন অনুগামী কাজলের সঙ্গে দেখা করে দাবি জানিয়েছেন যে, তারা এবার থেকে ‘কেষ্ট’র নয়, কাজলের সঙ্গে কাজ করবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ এই পরিস্থিতিকে কার্যত মজা করে “দলের মধ্যেই দলবদল” বলে অভিহিত করছেন।

বস্তুত, রাঙামাটির জেলায় কাজল-অনুব্রত দ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত। তিহাড় থেকে ফিরে আসার পর প্রকাশ্যে মুখে কেউ একে অপরের নাম না নিলেও, এই দুই তৃণমূল নেতার আচরণ বারবার তাদের বিভাজনকে স্পষ্ট করে দিয়েছে। গত বছরের দুর্গাপুজোর পরপর বিজয়া সম্মিলনীগুলিতে অনুব্রত আর কাজলকে এক মঞ্চে দেখা যায়নি। যদিও এই প্রসঙ্গ তারা একাধিকবার এড়িয়ে গেছেন।

গত শুক্রবার বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে গালিগালাজ করার অভিযোগ ওঠে অনুব্রতর বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে দল তাকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে ক্ষমা চাইলেও কেষ্ট একবারও থানায় হাজিরা দেননি। তার বদলে শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি গৃহবন্দি হয়ে যান। এর মধ্যেই গতকাল মঙ্গলবার সভাধিপতি কাজল শেখকে স্বমহিমায় মিছিল করতে দেখা যায়, যেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে স্লোগান উঠছিল। সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন কেষ্ট যখন নিচুপট্টির বাড়িতে আটকে, সেই সময় খোশমেজাজে ফের কাজলকে দেখা গেল।

এরপর আজ দেখা গেল, সাঁইথিয়া ব্লকের বনগ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের একাংশ সহ তৃণমূল নেতৃত্ব কাজল শেখের সঙ্গে দেখা করেছেন। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ বৈঠকও করেন তারা। বনগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তুষার মণ্ডল দাবি করেছেন, তিনি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী ছিলেন। কিন্তু একাধিক বিষয় নিয়ে কেষ্টদার কাছে গিয়েও সমস্যার সমাধান হয়নি, বরং অপদস্ত হতে হয়েছে। তাই তারা জেলা সভাধিপতি কাজল শেখের সঙ্গে দেখা করেছেন। কাজল শেখও বনগ্রাম পঞ্চায়েতের উন্নয়নে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

তুষারকান্তি মণ্ডল বলেন, “আমি কেষ্টদার অনুগামী ছিলাম। বিগত একমাস থেকে পঞ্চায়েতের কাজ নিয়ে গিয়েছি কেষ্টদার কাছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি। অপদস্ত হয়েছি। তাই আমরা ঠিক করেছি এবার আমরা কাজলের অনুগামী হয়েই লড়ব।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের সবার উচিত নিজেদের অনুগামী তৈরি না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী তৈরি করা।”

যদিও, কাজল শেখ নিজে এই বিষয়টিকে বিভাজন হিসেবে দেখতে চান না। তিনি বলেছেন, তাদের নিজেদের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। তবে এই ঘটনাপ্রবাহ বীরভূমের তৃণমূল রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণ তৈরি করছে, যা আগামী দিনে কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy