
যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ এবং টাকা নিয়ে চাকরি পাওয়া অযোগ্যদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সল্টলেকের বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক–শিক্ষিকাদের অধিকার মঞ্চের আন্দোলন জারি রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলা এই আন্দোলনে গত বৃহস্পতিবার এক নতুন মাত্রা যোগ হয়, যখন বিকাশ ভবন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে যায় এবং পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। এই আবহে আজ, শনিবার বিকাশ ভবনের সামনে এক অভিনব প্রতিবাদ দেখা গেল।
চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকাদের মূল দাবিগুলি হলো: অবিলম্বে যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। আর টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়া অযোগ্যদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। যারা এই টাকা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা করতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের অধিকার মঞ্চ বিকাশ ভবন অভিযানে নামে। আন্দোলনকারীরা মিছিল করে এসে বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন, যার জেরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। আবার সন্ধ্যায় সরকারি কর্মীদের বাড়ি যেতে না দিয়ে ঘেরাও করা এবং পুলিশকে আক্রমণ করার অভিযোগ ওঠে আন্দোলনকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং আন্দোলনকারীদের হঠাতে পুলিশের পক্ষ থেকে লাঠিচার্জ করা হয় বলে অভিযোগ।
বৃহস্পতিবারের ঘটনার সময় বিধাননগর পৌরনিগমের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বিকাশ ভবনের ভিতরে ঢুকতে গেলে চাকরিহারারা তাকে ঘিরে ধরেন। তাকে ধরে রীতিমতো টানা হ্যাঁচড়া করার সঙ্গে ‘চাকরি চোর’ স্লোগান তোলেন আন্দোলনকারীরা। তখনও একপ্রস্থ বচসা হয়। আবার সব্যসাচী দত্তের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন চাকরিহারারা।
পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনার পর চাকরিহারারা তাদের আন্দোলন আরও তীব্রতর করার ডাক দিয়েছেন। তাদের হুঁশিয়ারি, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন জারি থাকবে।
এই আবহে আজ শনিবার দুপুরে সেখানে চাকরিহারাদের অবস্থান মঞ্চে আইএনটিইউসি সেবাদলের সমর্থন নিয়ে এক অভিনব প্রতিবাদ দেখা গেল। তারা মিছিল করে এসে আন্দোলন মঞ্চে জমায়েত করে। আইএনটিইউসি সেবা দলের এক কর্মী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছদ্মবেশে গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়ান পুলিশ অফিসারদের সামনে। তিনি পুলিশ অফিসারদের ফুল দিতে গেলে তারা নিতে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এই প্রতীকী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দেখে আন্দোলন মঞ্চে উপস্থিত সকলে সেলফি নিতে শুরু করেন। এমনকি চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকারাও সেখানে ভিড় করে সেলফি তোলেন।
এই ঘটনা দেখে প্রতীকী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঘিরে ধরে সংবাদমাধ্যম। পুলিশের লাঠিচার্জ শিক্ষকদের উপর কি সঠিক? এটা কি খুব দরকার ছিল? – এমন প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। জবাবে প্রতীকী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, “শিক্ষকদের মারধর করা এবং অপমান করা মানে শিক্ষাকেই অপমান করা। বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনের সামনে পুলিশ সেটাই করেছে। পুলিশের কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানাতে এবং শিক্ষকদের আন্দোলনের পাশে থাকার বার্তা দিতে এই অভিনব আয়োজন করা হয়েছে। বাংলা মানেই শান্তি এবং সম্প্রীতির জায়গা। সেই বার্তা পুলিশকেও আরও একবার মনে করিয়ে দিতে চেয়েছি।”
বিকাশ ভবন অভিযান ঘিরে বৃহস্পতিবারের ধুন্ধুমার পরিস্থিতির পর শনিবারের এই অভিনব প্রতিবাদ চাকরিহারাদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি এবং নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার ভিন্ন কৌশলকে সামনে এনেছে।