বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারাদের ধুন্ধুমার! ‘মুখ্যমন্ত্রীকে আসতে হবে’ অনড় আন্দোলনকারীরা

রাজ্য সরকারের নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিক্ষোভ দ্বিতীয় দিনেও উত্তপ্ত রইল সল্টলেকের বিকাশ ভবন চত্বর। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন শুক্রবার সকালে আরও তীব্র আকার ধারণ করে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার রাতের পুলিশি পদক্ষেপের প্রতিবাদে এদিন ‘ধিক্কার দিবস’ পালন করছেন আন্দোলনকারীরা।

শুক্রবার সকাল থেকেই বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভিড় জমে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এদিন সকাল থেকে পুলিশের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। গতকালের চেয়ে এদিন পুলিশ সংখ্যাও বাড়ানো হয়। পুলিশের ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভকারীদের আটকানোর চেষ্টা করা হলেও আন্দোলনকারীরা তাঁদের অবস্থানে অনড় থাকেন।

বিক্ষোভকারীরা এদিন তাঁদের দাবিতে আরও বেশি সোচ্চার হয়েছেন। তাঁদের প্রধান দাবি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এসে তাঁদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা এলাকা ছাড়বেন না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। এই আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে শুক্রবার বিকেলে বিকাশ ভবনের সামনে একটি গণ কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়েছে, যেখানে বেশ কয়েকজন বিশিষ্টজনের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ বিকাশ ভবন ঘেরাও অভিযান শুরু করেন। সারাদিন বিক্ষোভ চলার পর রাতেও তাঁরা সেখানেই অবস্থান চালিয়ে যান। কিন্তু রাতের দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। এই ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা বিকাশ ভবনের অদূরেই রাস্তায় বসে পড়েন এবং রাতভর অবস্থান করেন। আন্দোলনকারীদের আরও অভিযোগ, রাতে তাঁদের অবস্থান মঞ্চের পাশ দিয়ে বেশ কয়েকটি বাইক সন্দেহজনকভাবে যাতায়াত করে এবং এই সময় পুলিশ, বিশেষ করে মহিলা আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা দিতে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মূল দাবি হলো, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ওএমআর শিটের মাধ্যমে যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রস্তুত করে রাজ্য সরকার যেন এই মামলার রিভিউ পিটিশন দাখিল করে। তাঁরা চান তাঁদের ন্যায্য বিচার হোক, নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ‘চোরেরা’ শাস্তি পাক, এবং অন্যের পাপের দায় যেন তাঁদের ওপর না চাপানো হয়। উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করে দেওয়ায় রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী চাকরি হারিয়েছেন। যদিও শীর্ষ আদালত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘অযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত নন এমন শিক্ষকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।

বর্তমানে বিকাশ ভবনের সামনে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। আন্দোলনকারীরা নিজেদের দাবিতে অনড় এবং সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে সকলে তাকিয়ে আছেন।