হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনি এলাকায় সন্দেহজনক ড্রোন, তল্লাশি চালিয়েও খোঁজ পেলো না পুলিশ

আলিপুরদুয়ার জেলার হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনির কাছে একটি রহস্যময় ড্রোন উড়তে দেখে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বায়ুসেনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খবর পেয়ে জেলা পুলিশ ড্রোনের সন্ধানে বিশাল তল্লাশি অভিযান শুরু করলেও বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সেটির কোনো হদিশ মেলেনি। ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই এমন ঘটনা উদ্বিগ্ন করেছে প্রশাসনকে। এই ঘটনার পর আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ ড্রোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন করে কড়া নির্দেশিকা জারি করার কথা জানিয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনির কাছে একটি ড্রোন উড়তে দেখেন বায়ুসেনা কর্তৃপক্ষ। দ্রুত তারা আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশকে বিষয়টি জানান। খবর পেয়েই জেলা পুলিশের নির্দেশে ফালাকাটা থানা এবং মাদারিহাট থানার পুলিশ ড্রোনটি খুঁজে বের করার জন্য সাঁড়াশি অভিযানে নামে। ড্রোনটির লোকেশন ট্র্যাক করা সম্ভব হয়েছিল এবং সূত্র অনুযায়ী সেটিকে শেষবার দক্ষিণ খয়েরবাড়ি জঙ্গল এলাকায় উড়তে দেখা গিয়েছিল।

এরপর ওই নির্দিষ্ট দক্ষিণ খয়েরবাড়ি জঙ্গল এলাকায় রাতভর এবং বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ব্যাপক তল্লাশি চালায় পুলিশ। কিন্তু রহস্যময় ড্রোনটির কোনো খোঁজ মেলেনি। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমানে যুদ্ধ বিরতি চললেও, একটি সামরিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকার কাছে এভাবে ড্রোন ওড়া এবং সেটির গায়েব হয়ে যাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। এই ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি এই হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনির কাছে একটি গাছে উঠে উঁকিঝুঁকি মারার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন এই ঘটনা ঘটল।

পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ এবার ড্রোন ব্যবহারে রাশ টানতে চলেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এখন থেকে বিয়েবাড়ি, রিলস, শর্ট ফিল্ম বা অন্য যেকোনো বাণিজ্যিক বা ব্যক্তিগত কাজে ড্রোন ব্যবহার করতে গেলে পুলিশের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। অনুমতি নেওয়ার ক্ষেত্রে ড্রোন এবং তার ব্যবহারকারী সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য স্থানীয় থানায় জমা দিতে হবে এবং নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।

আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশি এই বিষয়ে বলেন, “জেলার কোথাও ড্রোন ব্যবহার করতে গেলে পুলিশের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নিতে হবে। মানতে হবে নির্দিষ্ট কয়েকটি নিয়ম। সেই অনুমতি না নেওয়া হলে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে গ্রেফতারও করা হতে পারে।”

পুলিশ কেন ড্রোন ব্যবহারে এতটা কড়াকড়ি করছে, তার নেপথ্যে রয়েছে এই জেলার কৌশলগত গুরুত্ব। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আলিপুরদুয়ার জেলা সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল। এখানে হাসিমারাতে রয়েছে বায়ুসেনা ছাউনি, যেখানে অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান রাখা আছে। পাশাপাশি রয়েছে একটি সামরিক সেনা ছাউনি। ফালাকাটাতে আছে দুটি এসএসবি ক্যাম্প। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ জলদাপাড়া ও বক্সার মতো জাতীয় উদ্যান এবং আলিপুরদুয়ার রেল জংশনও এই জেলায় অবস্থিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভারত–ভূটান সীমান্ত এই জেলার খুব কাছে এবং বাংলাদেশ সীমান্তও খুব বেশি দূরে নয়। এই ভৌগোলিক ও সামরিক সংবেদনশীলতার কারণেই ড্রোন ব্যবহারে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। রহস্যময় ড্রোনটির হদিশ না মেলায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।