“এই প্রথম ৭ ফুট লম্বা শিবলিঙ্গ”-অমরনাথে ভোলেনাথের প্রথম ছবি, দেখে প্রণাম করছে ভক্তরা

জম্মু ও কাশ্মীর যখন পহেলগামে সাম্প্রতিক জঙ্গি হানার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার আবহে থমথমে, ঠিক সেই সময়েই পুণ্যার্থীদের জন্য এক অত্যন্ত প্রতীক্ষিত এবং আনন্দের খবর এসেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের পবিত্র অমরনাথ গুহায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বরফের শিবলিঙ্গের প্রথম ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এবারের হিম লিঙ্গটি গতবারের চেয়েও বেশ বড় আকার ধারণ করেছে এবং এর উচ্চতা প্রায় ৭ ফুট বলে জানা গেছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত অধীর আগ্রহে অমরনাথ গুহায় গঠিত এই অলৌকিক বরফের শিবলিঙ্গের প্রথম ছবির জন্য অপেক্ষা করেন।
আগামী ৩ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে পুণ্য যাত্রা
২০২৫ সালের পবিত্র অমরনাথ যাত্রা আগামী ৩ জুলাই থেকে শুরু হতে চলেছে। এই পুণ্য তীর্থযাত্রা প্রায় ৩৮ দিন ধরে চলবে এবং ৯ আগস্ট রাখি পূর্ণিমার শুভ দিনে ‘ছড়ি মোবারক’-এর মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটবে। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল এবং শ্রী অমরনাথজি শ্রাইন বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোজ সিনহা সম্প্রতি এই বছরের যাত্রার সমস্ত প্রস্তুতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করেছেন। অমরনাথ যাত্রার জন্য দেশজুড়ে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যে পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে।
রেকর্ড সংখ্যক রেজিস্ট্রেশন, উন্নত হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
গত ১৫ এপ্রিল থেকে অফলাইন এবং অনলাইন মাধ্যমে অমরনাথ যাত্রার জন্য অগ্রিম রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। জানা গেছে, ইতিমধ্যেই প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার ভক্ত নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন, যা গতবারের তুলনায় বেশি হওয়ার ইঙ্গিত। সূত্র মারফত জানা গেছে, পহেলগাঁওতে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনা অমরনাথ যাত্রার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার উপর এখনও পর্যন্ত কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। এবারের যাত্রাকে আরও সুসংগঠিত এবং নিরাপদ রাখতে শ্রী অমরনাথজি শ্রাইন বোর্ড বেশ কিছু উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ই-কেওয়াইসি, আরএফআইডি কার্ডের ব্যবহার এবং অন-স্পট রেজিস্ট্রেশনের মতো ব্যবস্থাগুলোকে আরও উন্নত করা। পুণ্যার্থীদের বয়স ১৩ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং শারীরিক সুস্থতার প্রমাণ হিসেবে একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দেওয়া আবশ্যক।
কিংবদন্তি ও অলৌকিকত্বে ভরা অমরনাথ গুহা
জম্মু ও কাশ্মীরের পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত পবিত্র অমরনাথ মন্দিরের সঙ্গে বহু প্রাচীন কিংবদন্তি ও বিশ্বাস জড়িয়ে আছে। এই মন্দিরটিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ৫১টি শক্তিপীঠের অন্যতম বলে মনে করেন, যেখানে দেবী সতীর দেহাংশ পতিত হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। একইসঙ্গে, অমরনাথ গুহাকে সেই পবিত্র স্থান হিসেবেও গণ্য করা হয়, যেখানে দেবাদিদেব মহাদেব দেবী পার্বতীকে জীবন এবং অনন্তকালের রহস্য ব্যাখ্যা করেছিলেন। এই মন্দিরের বেশিরভাগ অংশই সারা বছর ধরে তীব্র তুষারে ঢাকা থাকে এবং শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালে খুব স্বল্প সময়ের জন্য পুণ্যার্থীদের দর্শনের জন্য খোলা হয়।
প্রাকৃতিকভাবে গঠিত শিবলিঙ্গ ও দুর্গম তীর্থপথ
অমরনাথ গুহার সবচেয়ে অলৌকিক বিষয় হলো, এখানে প্রাকৃতিকভাবে বরফের যে শিবলিঙ্গটি গঠিত হয়, তা গুহার ছাদ থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ার ফলেই তৈরি হয়। ৪০ মিটার উঁচু এই গুহারূপী মন্দিরে পৌঁছানোর জন্য পুণ্যার্থীদের প্রায় ৩৫ থেকে ৪৮ কিলোমিটার দুর্গম পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করতে হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২,৭৫৬ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই পবিত্র গুহার পথ অত্যন্ত দুর্গম এবং পরিবেশগতভাবে চ্যালেঞ্জিং। এই উচ্চতা এবং দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য অমরনাথ মন্দিরে যেতে ইচ্ছুক পুণ্যার্থীদের অবশ্যই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হয় এবং শারীরিক সক্ষমতা থাকা জরুরি।
সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে এই পবিত্র যাত্রার প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে, যা পুণ্যার্থীদের আস্থারই প্রতিফলন।