পহেলগাম হামলার রেশ কাটেনি! করাচি টু আমেদাবাদ নামল রহস্যময় দুই চপার, ঘনীভূত রহস্য

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত যখন পাকিস্তানের জন্য নিজেদের আকাশপথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে, ঠিক সেই সময়ই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তানের করাচি থেকে দুটি রহস্যময় চপার সরাসরি উড়ে এসে গুজরাটের আমেদাবাদ বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। কে বা কারা ছিলেন ওই চপার দুটিতে? কেনই বা এমন স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে তাদের ভারতে নামার অনুমতি দেওয়া হলো? এ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো স্পষ্ট উত্তর না মেলায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
সূত্র মারফত জানা গেছে, লিওনার্দো এডব্লিউ–১৩৯ মডেলের এই চপার দু’টি (যা পূর্বে অগস্তা ওয়েস্টল্যান্ড নামে পরিচিত ছিল) গত রবিবার সৌদি আরবের দামাম থেকে যাত্রা শুরু করে। দামাম থেকে উড়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই চপার দু’টি সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর শারজায় প্রথমবার অবতরণ করে। সেখান থেকে তারা রওনা দেয় পাকিস্তানের করাচির উদ্দেশে। করাচিতে স্বল্প বিরতির পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চপার দু’টি এবার ভারতের আমেদাবাদের দিকে উড়ান দেয়।
এটিসি-র প্রাথমিক বাধা, তারপর হঠাৎ অনুমতি!
করাচি এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর ছাড়পত্র নিয়ে আকাশে ওড়ার পরই চপার দু’টি আমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু আমেদাবাদ এটিসি তাৎক্ষণিকভাবে চপার দু’টির পাইলটদের স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, কোনো পরিস্থিতিতেই তাদের আমেদাবাদে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হবে না। কারণ হিসেবে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করা হয় – পহেলগাম হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানের আকাশসীমা থেকে আসা কোনো বিমান বা চপারকে ভারতীয় ভূখণ্ডে নামতে দেবে না, এবং এই চপার দু’টিও সেই নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন। সূত্র আরও দাবি করেছে যে, আমেদাবাদ এটিসি-র থেকে অবতরণের অনুমতি না মেলার পর চপার দু’টি পাকিস্তানেরই কোনো একটি শহরে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়।
যুদ্ধকালীন তৎপরতা ও নির্বিঘ্নে অবতরণ
কিন্তু নাটকীয় মোড় আসে এর পরেই। ওই চপার দু’টিকে আমেদাবাদে নামানোর জন্য কোথা থেকে যেন এক জোরদার ‘তৎপরতা’ শুরু হয়। সূত্র মারফত জানা গেছে, এই ‘যুদ্ধকালীন’ তৎপরতার পরই চপার দু’টি আবার আমেদাবাদের দিকে যাত্রা শুরু করে এবং আশ্চর্যজনকভাবে কোনো রকম বাধা ছাড়াই আমেদাবাদ বিমানবন্দরে নির্বিঘ্নে অবতরণ করে।
উঠেছে একাধিক প্রশ্ন
এই রহস্যময় অবতরণের পর স্বাভাবিকভাবেই একাধিক প্রশ্ন উঠে এসেছে, যার কোনো স্পষ্ট উত্তর এখনো মেলেনি:
১. চপার দু’টির ভেতরে কে বা কারা ছিলেন?
২. কেন প্রথমে আমেদাবাদে নামার অনুমতি না দিয়েও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হঠাৎ সেই অনুমতি দেওয়া হলো এবং চপার দু’টি নামল? কোন ‘অজ্ঞাত কারণ’ কাজ করেছিল এর পেছনে?
৩. সাধারণত চপার এত লম্বা আকাশপথে (যেমন দামাম থেকে আমেদাবাদের প্রায় ২৩০০ কিমি দূরত্ব) চলাচল করে না। তাহলে ঠিক কীসের প্রয়োজনে এই চপার দু’টিকে এত দীর্ঘ পথে পাঠানো হলো?
৪. পথ দীর্ঘ হওয়ার কারণেই কি প্রথমে শারজা এবং তারপর করাচিতে যাত্রা করে জ্বালানি ভরা হলো? কারণ লিওনার্দো এডব্লিউ–১৩৯ চপার একবারে সর্বোচ্চ ১২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে, সুতরাং রিফুয়েলিং প্রয়োজন ছিল। তবে শুধুমাত্র জ্বালানি ভরার কারণেই এই বিরতি নাকি এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল?
৫. সূত্র মারফত জানা গেছে, চপার দু’টির রেজিস্ট্রেশন ছিল আমেরিকার। আমেরিকান রেজিস্ট্রেশন সত্ত্বেও কেন তারা পাকিস্তান হয়ে ভারতে এল এবং এই সময়ে এল, তা রহস্যকে আরও বাড়িয়েছে।
৬. সাধারণত গুরুতর মেডিক্যাল ইমার্জেন্সির মতো পরিস্থিতিতে এমন চপার মুভমেন্ট দেখা যায়। এই ক্ষেত্রেও তেমন কিছু হয়েছিল কিনা, সে বিষয়েও কোনো স্পষ্ট তথ্য মেলেনি।
সব মিলিয়ে পহেলগামের জঙ্গি হামলার আবহে পাকিস্তানের করাচি থেকে আসা এই জোড়া রহস্যময় চপারের উড়ান অন্য এক গভীর রহস্যের জাল বুনে রেখেছে। এই ঘটনার নেপথ্যে আসল কারণ কী, তা হয়তো সময় এলেই স্পষ্ট হবে।