কলকাতা পুরসভার বকেয়া সম্পত্তি করের পরিমাণ ঠিক কত? বিপুল পরিমাণ অঙ্কের টাকা উদ্ধারে উদ্যোগ কর্তাদের

কলকাতা পুরসভা সম্প্রতি সম্পত্তি কর আদায়ের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন সাফল্য অর্জন করে খবরের শিরোনামে এসেছিল। তবে এই সাফল্যের উজ্জ্বল চিত্রের আড়ালেই লুকিয়ে ছিল বকেয়া করের এক বিশাল অন্ধকার দিক, যা সামনে আসতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে পুর কর্তৃপক্ষের। প্রদীপের নীচের অন্ধকারের মতোই এবার প্রকট হয়েছে বকেয়া সম্পত্তি করের প্রকৃত পরিমাণ, যা উদ্ধার করতে এবার বিশেষ উদ্যোগ নিতে চলেছে পুরসভা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই বিপুল অঙ্কের সিংহভাগ বকেয়া রয়েছে শহরের ধনী ব্যক্তি এবং বিভিন্ন সংস্থার কাছে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর অনুযায়ী, দীর্ঘ বছর ধরে শহরের বুকে বসবাস করছেন বা ব্যবসা করছেন এমন বহু স্বচ্ছল নাগরিক এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে পুরসভার বিশাল অঙ্কের সম্পত্তি কর পাওনা রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এই বকেয়া বাড়তে বাড়তে দাঁড়িয়েছে এক পাহাড় প্রমাণ অঙ্কে। হিসাব সামনে আসতেই দেখা গেছে, বকেয়া সম্পত্তি করের পরিমাণ সুদ এবং জরিমানা সহ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি! পুরসভার আধিকারিকরা মনে করছেন, এই বিপুল অঙ্কের টাকা যদি কোষাগারে জমা পড়ে, তবে কলকাতার বহু আর্থিক সমস্যার সমাধান মুহূর্তেই হয়ে যাবে।
কে বা কারা এত বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি দিয়েছেন, সেই পরিসংখ্যান আরও চমকে দেওয়ার মতো। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, ৫০ লক্ষ টাকা থেকে এক কোটি টাকার মধ্যে মূল সম্পত্তি কর বকেয়া রেখেছেন এমন করদাতার সংখ্যা প্রায় ৭৯৬ জন। অন্যদিকে, এক কোটি টাকারও বেশি মূল কর বকেয়া রয়েছে এমন করদাতার সংখ্যা ৭২৮ জন।
বিস্তারিত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৫০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যে যে ২৪৪ কোটি টাকা মূল বকেয়া রয়েছে, তার সঙ্গে সুদ এবং জরিমানা যোগ হয়ে অঙ্কটা পৌঁছেছে ৫৫৮ কোটি টাকায়। আর এক কোটি টাকার বেশি বকেয়া থাকা করদাতাদের মূল করের পরিমাণ ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা, যা সুদ এবং জরিমানা সহ আকাশ ছুঁয়ে ২ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এই দুটি হিসাব যোগ করলে কলকাতা পুরসভার মোট বকেয়া পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। এই বিশাল অঙ্কের টাকা উদ্ধারের জন্য এবার পুরসভা কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে তৎপর হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি এরিয়া ইউনিটকে টিম গঠন করে এই বকেয়া আদায়ের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। পুরসভার কর্তারা জানেন, কাজটি অত্যন্ত কঠিন হলেও এটি করতেই হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গত অর্থবর্ষে কড়াকড়ি করে কিছু বকেয়া আদায় হলেও এখনও অনেক টাকা বাকি। এবার যারা বকেয়া পরিশোধ করবেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পথে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।