বিশেষ: ভারত VSপাকিস্তান, সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে? দেখেনিন এক নজরে

জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা এবং তার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তৈরি হওয়া চরম উত্তেজনার আবহে দুই দেশের সামরিক শক্তি নিয়ে নতুন করে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। দিল্লি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিন্ধু জল চুক্তি সাময়িক রদ করা-সহ বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক ও সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পর ইসলামাবাদও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধার শঙ্কা তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে সামরিক শক্তিতে কোন দেশ কতটা এগিয়ে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স এবং অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতার একটি তুলনামূলক চিত্র নিচে দেওয়া হলো:
জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক শক্তি: জনসংখ্যা এবং অর্থনৈতিক শক্তির নিরিখে ভারতের তুলনায় পাকিস্তান অনেকটাই পিছিয়ে। ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি, যেখানে পাকিস্তানের জনসংখ্যা প্রায় ২৪ কোটি। সামরিক বাহিনীতে কাজ করার জন্য ভারতে প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষ প্রস্তুত আছেন, অপরদিকে পাকিস্তানে এই সংখ্যা মাত্র ১ কোটি। অর্থনৈতিক দিক দিয়েও ভারত সামরিক খাতে অনেক বেশি ব্যয় করে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত সামরিক খাতে ৭৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছিল, যা ছিল তাদের মোট বাজেটের ১৩ শতাংশ। অপরদিকে একই সময়ে পাকিস্তানের সামরিক খাতে বাজেট ছিল ৬.৩৪ বিলিয়ন ডলার।
সক্রিয় সামরিক জনবল: সেনাবাহিনীর সক্রিয় জনবলের দিক থেকেও ভারত পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সেনাবাহিনীর সক্রিয় জনবলের সংখ্যা ১৪ লাখ ৪০ হাজার, যা তাদের বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সেনাবাহিনীতে পরিণত করেছে। এর পাশাপাশি তাদের ১১ লাখ ৫০ হাজার রিজার্ভ সেনা এবং আধাসামরিক বাহিনীতে প্রায় ২৫ লাখ সদস্য রয়েছে।
অপরদিকে পাকিস্তানের পেশাদার ও যুদ্ধের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সক্রিয় সেনার সংখ্যা ৬ লাখ ৫০ হাজার। এছাড়া তাদেরও বিপুল সংখ্যক রিজার্ভ সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য রয়েছে।
সেনাবাহিনীর সক্ষমতা: স্থলবাহিনীর সক্ষমতার দিক থেকেও ভারত উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী। ভারতের সেনাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি অর্জুন প্রধান যুদ্ধ ট্যাংক, শক্তিশালী টি-৯০ ‘ভিম’ ট্যাংক, পিনাকা মাল্টি-ব্যারেল রকেট লঞ্চার, দূরপাল্লার ব্রাহমোস ক্রুস মিসাইল, হাউইটার ও অন্যান্য আধুনিক কামান রয়েছে।
পাকিস্তানের সেনাদের কাছে আল-খালিদ ট্যাংকের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম থাকলেও, তারা মূলত চীন ও পশ্চিমাদের অন্যান্য আধুনিক অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল।
বিমানবাহিনীর সক্ষমতা: ভারতের বিমানবাহিনী বিশ্বের অন্যতম বড় এবং কার্যকরী। তাদের বিমানবাহিনীর মোট ২ হাজার ২২৯টি বিমান রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৬০০টি যুদ্ধবিমান, ৮৩১টি সাপোর্ট বিমান এবং ৮৯৯টি হেলিকপ্টার রয়েছে। তাদের বিমানবাহিনীতে অত্যাধুনিক রাফায়েল, মিরেজ ২০০০, মিগ-২৯ এবং শক্তিশালী সুখোই এসইউ-৩০ এমকেআই এর মতো যুদ্ধবিমান রয়েছে। এছাড়া নিজস্ব প্রযুক্তিতে তেজাস নামের একটি অত্যাধুনিক বিমানও তৈরি করছে ভারত।
অপরদিকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বিমান রয়েছে ১ হাজার ৪৭০টি। যারমধ্যে ৪৭৯টি যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার রয়েছে ৩৪২টি, পরিবহণ বিমান রয়েছে ৩৯টি এবং প্রশিক্ষণ বিমান আছে ২৮৩টি। দেশটির বিমানবাহিনীর কাছে আছে তাদের নিজস্ব ও চীনা প্রযুক্তির জেএফ-থান্ডার, ফ্রান্সের তৈরি মিরাজ-৫, মিরাজ-৩, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি লকহিড এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন সহ অন্যান্য দেশের বিমান ও হেলিকপ্টার।
নৌবাহিনীর সক্ষমতা: নৌবাহিনীর সক্ষমতার দিক থেকেও ভারত অনেক এগিয়ে। ভারতের নৌবাহিনী বেশ বড় এবং শক্তিশালী, তাদের রয়েছে ১৩০টির বেশি যুদ্ধজাহাজ, যারমধ্যে আছে অত্যাধুনিক বিমানবাহী রণতরী, ডেস্ট্রয়ার এবং সামমেরিন। দেশটির নৌবাহিনীতে প্রায় ৬৭ হাজার সদস্য রয়েছে। তাদের বিমানবাহী জাহাজ আছে দুটি (যেমন আইএনএস বিক্রমআদিত্য), ১৮টি সাবমেরিন (যার মধ্যে একটি পারমাণবিক শক্তিসমৃদ্ধ)।
অপরদিকে পাকিস্তানের নৌবাহিনী মূলত প্রতিরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে সাজানো হয়েছে। তাদের জাহাজ রয়েছে ৭৫টির বেশি, যারমধ্যে ১৩টি সাবমেরিনও আছে। পাক নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫ হাজার সদস্য। তবে পাকিস্তানের কোনো বিমানবাহী রণতরী নেই, যা আধুনিক নৌ যুদ্ধের জন্য একটি বড় ঘাটতি।
সামগ্রিকভাবে জনসংখ্যা, সামরিক জনবল, সামরিক বাজেট এবং স্থল, বায়ু ও নৌবাহিনীর আধুনিক সরঞ্জাম ও সক্ষমতার দিক থেকে ভারত তার প্রতিবেশী পাকিস্তান থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বলে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স এবং অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে। যদিও সামরিক শক্তি কেবল সংখ্যার উপর নির্ভর করে না, আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, কৌশল এবং গোয়েন্দা তথ্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমান উত্তেজনার আবহে এই তুলনামূলক চিত্রটি দুই দেশের সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়।