দেনার দায়ে কালিয়াচকে চরম পদক্ষেপ নিঃসন্তান দম্পতির

ঋণের বোঝা আর অনটনের সংসারে হয়তো শান্তি ছিল না। তাই চরম পথ বেছে নিলেন এক নিঃসন্তান দম্পতি। বৃহস্পতিবার সকালে মালদার কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের বীরনগর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের জালারদিটোলা গ্রামে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তারা। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে এবং ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে কলেজ ও হাসপাতালে পাঠায়। এদিনই তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
মৃত দম্পতির নাম সুজিত ঘোষ (৪২) এবং সুষমা ঘোষ (৩৬)। প্রায় ১৫ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু কোনো সন্তান ছিল না। সুজিতের বাবা ফরাক্কা এনটিপিসির কর্মী ছিলেন এবং প্রায় ১২ বছর আগে অবসর নিয়েছিলেন। পাঁচ বছর আগে তিনি মারা যান। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, সুজিত সেভাবে কোনো কাজকর্ম করতেন না। বাবার জমানো টাকাই ছিল তাদের সংসারের মূল অবলম্বন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যে অশান্তিও হতো।
জালারদিটোলা গ্রামে তাদের দোতলা বাড়ি। বাড়ির নীচতলায় সুজিতের মা থাকেন। সুজিত ও সুষমাও দিনের বেশিরভাগ সময় নীচতলাতেই কাটাতেন এবং রাতে দোতলার ঘরে ঘুমোতে যেতেন। প্রায় সাত বছর আগে সুজিতের দাদা ও বৌদি মারা যান। তাদের একমাত্র ছেলে গোপালকে সুজিত ও সুষমাই নিজেদের কাছে রেখে মানুষ করছিলেন। ভাইপো গোপালও তাদেরকেই বাবা-মা বলে ডাকত। জানা গেছে, এভাবেই দিন চলতে চলতে সুজিতের বাজারে বেশ মোটা অঙ্কের ঋণ হয়ে গিয়েছিল। গত কিছুদিন ধরে পাওনাদাররা টাকার জন্য তাকে চাপ দিচ্ছিলেন। এই নিয়ে তিনি চরম মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। সম্ভবত এই কারণেই এদিন সকাল ১০টা নাগাদ বাড়ির দোতলার ঘরে সুজিত ও সুষমা একসঙ্গে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
গোপাল এই মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানায়, “কী কারণে এমনটা হলো আমরা জানি না। আমাদের দোতলা বাড়ি। আজ সকালে আমি উপরের ঘরে ছিলাম। সকাল ১০টা নাগাদ বাবা-মা এসে আমাকে নীচে যেতে বলে। আমি জিজ্ঞেস করলে জানায়, তারা ঘুমোবে। আমি নীচে চলে আসি। কিছুক্ষণ পর ঠাকুমা আমাকে বলে, বাবা-মা সকালে কিছু খায়নি। ঠাকুমা পুজোর প্রসাদের ফল কেটেছে, যেন আমি বাবা-মাকে প্রসাদ খেতে দিয়ে আসি। আমি প্রসাদ নিয়ে উপরে যাই। গিয়ে দেখি দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পাইনি। তখন জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি, ঘরের ভেতরে একই শাড়িতে দু’জন ঝুলছে। সেই দৃশ্য দেখে আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। চিৎকার করে আশেপাশের লোকজনকে ডাকতে শুরু করি।” প্রতিবেশীরা ছুটে এসে সুজিত ও সুষমাকে স্থানীয় বেদরাবাদ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
এলাকার বাসিন্দা মণি ঘোষ বলেন, “বাবার জমানো টাকা যতদিন ছিল, ছেলেটা মদ খেয়ে উড়িয়েছে। রোজগার করত না। বাজারে অনেক টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। টাকা-পয়সা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সংসার চালাতে পারছিল না। সম্ভবত সেই কারণেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পুলিশ এসেছে। সবকিছু খতিয়ে দেখছে।”
কালিয়াচকের এসডিপিও ফয়জল রাজা জানিয়েছেন, “দেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও তার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যার ঘটনাই বলে মনে হচ্ছে। এই ঘটনায় দুটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।”