‘আসামির ভালো ব্যবহার’-ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন শীর্ষ আদালতে, জেনেনিন পুরো মামলা

নিজের স্ত্রী ও চার সন্তানকে নৃশংসভাবে খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত এক ব্যক্তির ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। কেরালা হাইকোর্ট রেজি কুমার নামে ওই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল। তবে ১৬-১৭ বছর কারাবাসের সময়ে ‘ভালো ব্যবহার’ ও ‘মানসিক স্বাস্থ্যের’ কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার শীর্ষ আদালত এই রায় দেয়। বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সঞ্জয় করোল ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ জানায়, জেলে থাকার সময় রেজি ‘বার বার আদর্শ বন্দি হওয়ার চেষ্টা করেছে’।
রেজি কুমারের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী লিসি এবং চার নাবালক সন্তানকে খুন করার অভিযোগ ছিল। অভিযোগপত্রে নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ ও খুনের গুরুতর অভিযোগও যুক্ত ছিল। ২০০৮ সালের ৮ জুলাই স্ত্রী লিসির বিবাহ–বহির্ভূত সম্পর্ক আছে এবং তিন বছরের শিশুকন্যাটি তার নিজের নয়— এমন সন্দেহের বশে শ্বাসরোধ করে লিসিকে খুন করে সে। এরপর ১৩ জুলাই দুই ছেলেমেয়েকে (১০ বছরের ছেলে ও ৩ বছরের মেয়ে) খুন করে। মায়ের মৃত্যুর অজুহাতে ৯ ও ১২ বছরের অপর দুই মেয়েকে রামপুরের স্কুল হোস্টেল থেকে বাড়িতে ডেকে আনে সে। ২৩ জুলাই বড় মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করে এবং সে দিনই ছোট মেয়েটিকেও খুন করে রেজি। ২৩ জুলাই দুই মেয়ের দেহ বাড়িতেই পাওয়া যায়। ২৫ জুলাই সেপটিক ট্যাঙ্কে মেলে স্ত্রী লিসির দেহ। পাশের এক জমিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় মিলেছিল অপর দুই সন্তানের দেহও। এই খুনগুলির খবর জানাজানি হওয়ার পরে রেজির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক থাকা এক অন্য মহিলাও তার সঙ্গ পরিত্যাগ করেন।
পালক্কড় জেলার আমায়ুরে কৃষি শ্রমিকের কাজ করত রসায়নে স্নাতক রেজি। আমায়ুরেই এক ভাড়াবাড়িতে স্ত্রী লিসি ও দুই ছেলে–মেয়ের সঙ্গে থাকত সে। তার ৯ ও ১২ বছরের আরও দুই মেয়ে পালা জেলার রামপুরমে এক প্রাইভেট স্কুলে পড়ত ও হস্টেলে থাকত।
এই নৃশংস খুনগুলির জন্য ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর কেরালা হাইকোর্ট রেজিকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল। রায়ে বলা হয়েছিল, ‘এই মামলায় দেখা যাচ্ছে, আবেদনকারী অভিযুক্ত তার স্ত্রী ও চার সন্তানের খুনের পরিকল্পনা আগে থেকে করে রেখেছিল এবং দু’সপ্তাহের মধ্যে তা কার্যকরও করেছিল’।
এই রায়ের পরে শীর্ষ আদালতে আবেদন করা হলে এটি ‘বিরল থেকে বিরলতম’ ঘটনা কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়। সুপ্রিম কোর্ট আসামীর প্রোবেশন অফিসারের রিপোর্ট, তার মানসিক অবস্থার মূল্যায়ন ও অন্যান্য তথ্য খতিয়ে দেখে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ মনে করে, এই খুনগুলির আগে রেজির কোনও অপরাধের ইতিহাস না থাকা, ১৬-১৭ বছর কারাবাসের সময়ে তার ভালো ব্যবহার, মানসিক স্বাস্থ্যের জটিলতা ও বার বার আদর্শ বন্দি হওয়ার চেষ্টার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া এক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত নয়। বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, জেলে বন্দি থাকাকালীন রোজগার করা টাকা সে নানা কাজে দান করেছে। এমনকি, ৮৩,০০০ টাকা সে সহবন্দিদের জামিনের অর্থমূল্য হিসেবেও ব্যয় করেছে। রেজির মানসিক অবস্থার রিপোর্টে জানা যায়, অতীতে যৌন হেনস্থার শিকার হওয়া, মানসিক অসুস্থতা, মাদকাসক্তির মতো বেশ কিছু ঘটনার জন্য তার মানসিক চাপ বেড়ে চলেছিল।
তবে আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তার অপরাধের গুরুত্ব ও তার খুন করা মানুষের সংখ্যা বিবেচনা করে, বিশেষ করে তাদের মধ্যে চার জন তার নিজের সন্তান হওয়ায় তাকে মুক্ত করে দেওয়া উচিত নয়।