“মাইক বাজানো নিয়ে নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা”-SSC ভবনের সামনে চাকরিহারাদের মুখোমুখি অবস্থান

পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) ভবনের সামনে চাকরিহারাদের আন্দোলনে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনরতদের মধ্যেই এবার দু’টি ভিন্ন পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে নেমেছে, যাদের মধ্যে মতপার্থক্য এবং চাপা সংঘাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজ্য শিক্ষা দপ্তর চাকরিহারাদের মধ্যে থেকে ‘নন-টেন্টেড’ বা বৈধ শিক্ষকদের একটি তালিকা স্কুলগুলিতে পাঠানো শুরু করার পর থেকেই এই নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার বিকেলে মাইক বাজানো নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তাপ বাড়ে।
জানা গেছে, এসএসসি সম্প্রতি একটি তালিকা তৈরি করে বিকাশ ভবনে পাঠায়, যা রাজ্য শিক্ষা দপ্তর ডিস্ট্রিক্ট ইন্সপেক্টর (DI) অফিস মারফত স্কুলে স্কুলে পাঠাচ্ছে। এই তালিকায় প্রায় ১৫ হাজার ৪০৩ জন ‘নন-টেন্টেড’ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর নাম রয়েছে, যাদের স্কুলে কাজে যোগ দেওয়ার কথা। বুধবার থেকে এই তালিকা স্কুলে পৌঁছতে শুরু করার পর বৃহস্পতিবার সকাল অবধি এসএসসি ভবনের সামনের চত্বর অপেক্ষাকৃত শান্ত ছিল। কারণ, তালিকার অন্তর্ভুক্ত অনেকেই হয়তো স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে বেলা বাড়তেই অন্য ছবি দেখা যায়। সল্টলেকের ময়ূখ ভবন থেকে চাকরিহারাদের একটি নতুন দল মিছিল করে এসএসসি-র কার্যালয় আচার্য সদনের সামনে এসে অবস্থানে বসেন।
‘ইউনাইটেড টিচিং অ্যান্ড নন টিচিং ফোরাম’-এর ব্যানারে এই মিছিল ও অবস্থান হয়। তাদের মূল দাবি হলো, আদালতের নির্দেশে কর্মচ্যুত হওয়া বৈধ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের অবিলম্বে পুনর্বহাল করতে হবে। এই ফোরামের ব্যানারে কয়েক হাজার চাকরিহারা এদিন আচার্য সদনের সামনে জড়ো হন।
ফোরামের সদস্য সুস্মিতা ভদ্র নামে এক চাকরিহারা বলেন, “কোর্ট আমাদের টেন্টেড বলেনি। অথচ একদল ষড়যন্ত্রকারী আমাদের টেন্টেড বলে দাগিয়ে দিতে চাইছে। কোর্ট বিভাজন করতে পারেনি বলেই তো পুরো প্যানেলটা বাতিল করা হয়েছে। আমরা এসএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে জানতে চাই, কেন এই তালিকায় ভাগ হচ্ছে?”
শিল্পা কুণ্ডু নামে আরেক শিক্ষিকা বলেন, “২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। ১৪ বছর প্রাথমিকে চাকরি করে আজ এখানে চাকরি পেয়েছি। আমাদের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকার নাম পোর্টালে নেই। অথচ আমি উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা পর্যন্ত দেখেছি।” তাঁদের প্রশ্ন, কিসের ভিত্তিতে তাঁদের নাম বাদ গেল, এসএসসি চেয়ারম্যানকে তার জবাব দিতে হবে।
তবে বিকেলের পরিস্থিতি আরও কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গার্ড রেলের একপাশে বসেছিলেন ইউনাইটেড টিচিং অ্যান্ড নন টিচিং ফোরামের সদস্যরা, অন্যদিকে সোমবার থেকে এই চত্বরে যারা অবস্থান করছিলেন, তাদের কয়েক জন অপর পাশে বসে স্লোগান দিতে শুরু করেন। দুই পক্ষের স্লোগান, পাল্টা স্লোগানে পারদ চড়তে থাকে। মাইক বাজানো নিয়ে এই উত্তাপ আরও বাড়ে। শিল্পা কুণ্ডুর দাবি, “তিন দিন ধরে ওরাই তো রাস্তায় ছিল, আমরা তো আসিনি। আজ আমরা আসতেই ইচ্ছা করে মাইক বাজাচ্ছে।”
চাকরিহারাদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিন্ময় মণ্ডল বলেন, “আমাদের মাইকে গান চলছে। ওরা বলছে মাইক বন্ধ করুন। জোর করে মাইক বন্ধ করতে চাইছে। পুলিশ প্রশাসন দেখুক এটা। আমি বিধাননগর থানায় ফোন করলাম। গার্ড রেলের এ পার ও পার বলে কিছু হয় না। কিন্তু ওপারে যাঁরা আছেন, তাঁরা মার্কড টেন্টেড। এটা শুনলে রেগে যাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট, বাগ কমিটি বা সিবিআইয়ের রিপোর্টে সেটা বলা আছে।”
সব মিলিয়ে, চাকরিহারাদের নিজেদের মধ্যে এই বিভাজন এবং সংঘাত এসএসসি ভবনের সামনের আন্দোলনকে এক নতুন ও অপ্রত্যাশিত মাত্রা দিয়েছে। তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর একদিকে যেমন একাংশের স্কুলে ফেরার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তেমনই অন্য অংশের বঞ্চনার ক্ষোভ এখন সহ-আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেই প্রকাশ পাচ্ছে।
(বিঃদ্রঃ:খবরে তথ্যসূত্র ও ব্যবহৃত ছবি দুটোই এই সময়-এর)