রক্তে ভাসল পহেলগাঁওয়ের ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’, জেনেনিন নিহত ৩ বাঙালির পরিচয়

‘ভূস্বর্গ’ কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ উপত্যকা মুহূর্তেই ‘নরক’ হয়ে উঠল জঙ্গিদের হামলায়। এলোপাথাড়ি গুলিতে রক্তে ভেসে যায় ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত এই এলাকা। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, এই নৃশংস হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৭ জন জখম। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের তিন জন পর্যটকও।
ধর্মীয় পরিচয় জেনে নারকীয় হত্যা:
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এবং সূত্রের খবর অনুযায়ী, জঙ্গিরা শুধু এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে তারপর গুলি চালানো হয়। কারও কাপড় খুলে বা অন্যান্য চিহ্ন দেখে তাদের ধর্মীয় পরিচয় জানার চেষ্টা করে জঙ্গিরা। বেছে বেছে নিরীহ পর্যটকদের উপর এই হামলা চালানো হয়। জঙ্গিরা হোটেলে ঢুকেও বেছে বেছে পর্যটকদের উপর হামলা চালায়, অনেককে সেখানেই হত্যা করা হয়।
বাংলার তিন সন্তান:
এই হামলার শিকার হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেড়াতে যাওয়া তিন পর্যটক। নিহতরা হলেন দক্ষিণ কলকাতার বৈষ্ণবঘাটা লেনের বাসিন্দা বিতান অধিকারী, বেহালার বাসিন্দা সমীর গুহ এবং পুরুলিয়া ও ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন ঝালদা পুরসভার বাসিন্দা মণীশ রঞ্জন।
সমীর গুহের স্ত্রী’র লোমহর্ষক বর্ণনা:
নিহতদের তালিকায় রয়েছেন বেহালার বাসিন্দা সমীর গুহ। গরমে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। নিহত সমীর গুহের স্ত্রী সংবাদমাধ্যমে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, হামলার কিছুক্ষণ আগে তাঁরা ছবি তুলছিলেন এবং চেয়ারে বসে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। হঠাৎই গুলির শব্দ শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাদের শুয়ে পড়তে বলেন। সমীর গুহও নিজের মেয়েকে শুয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ততক্ষণে মুখে মাস্ক পরা সন্ত্রাসবাদীরা সামনে চলে আসে এবং বলতে থাকে ‘ইনকো মাত ছোড়না’ (এদের ছাড়বি না)। এরপর সমীর গুহকে সামনে পেয়ে নির্বিচারে গুলিতে তাঁর দেহ ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়।
পরিবারের সামনেই প্রাণ গেল বিতান অধিকারীর:
এই ভয়াবহ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার বৈষ্ণবঘাটা লেনের (বৈষ্ণবঘাটা পাটুলিও উল্লেখ আছে) বাসিন্দা বিতান অধিকারীও। টেক্সাস নিবাসী এই আইটি কর্মী ছুটি কাটাতে বাড়ি ফিরেছিলেন এবং সেই ফাঁকেই কাশ্মীর ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। গত ১৬ এপ্রিল তিনি স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কাশ্মীর ঘুরতে যান। আগামী ২৪ এপ্রিল তাঁদের ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ২২ এপ্রিল সকালে পহেলগাঁওয়ের বাইসরান উপত্যকায় জঙ্গি হামলার সময় তিনি সেখানেই ছিলেন। গুলির আঘাতে গুরুতর জখম হওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। স্ত্রী ও ছোট্ট শিশুর সামনেই প্রাণ যায় বাঙালি এই পর্যটকের।
হায়দরাবাদ নিবাসী আইবি কর্মকর্তা মণীশ রঞ্জনও নিহত:
কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত হয়েছেন পুরুলিয়া ও ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন ঝালদা পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, আইবি কর্মকর্তা মণীশ রঞ্জনও। কাজের সূত্রে তিনি হায়দরাবাদে থাকতেন। মণীশ হায়দরাবাদ থেকে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে পরিবার-সহ ছুটিতে পহেলগাঁওতে ঘুরতে গিয়েছিলেন এবং হামলার শিকার হন।
ধর্মীয় পরিচয় দেখে গুলি চালনার অভিযোগ:
নিহতদের পরিবারের কারও দাবি, সিঁথির সিঁদূর দেখে গুলি করা হয়েছে। কারও হাতে থাকা চূড়া দেখে। এই হামলার নিহত ২৬ জনের তালিকায় যাঁরা রয়েছেন তাঁরা সকলেই পুরুষ। কেউ বিয়ের মাত্র চারদিন পর সিঁথির সিঁদূর হারালেন, তো কেউ দু’মাস পর।
জঘন্য এই জঙ্গিহানার প্রতিবাদে গর্জে ওঠে দেশবাসী। সকলেরই দাবি, এই জঙ্গিহানায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিক কেন্দ্র সরকার এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রুখতে কড়া ব্যবস্থা নিক।