“সৌর প্যানেলের ওপর ৩৫২১ শতাংশ শুল্ক?”-এশিয়ার এই দেশটির এক পণ্যে আমেরিকার শুক্ল হামলা!

চীনের কোম্পানিগুলো শুল্ক এড়াতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার চারটি দেশে কারখানা স্থাপন করে সস্তা সোলার প্যানেল যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে – এমন অভিযোগের ভিত্তিতে কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের বিভিন্ন কোম্পানির সোলার প্যানেলের ওপর অত্যন্ত চড়া শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কম্বোডিয়ার কিছু কোম্পানির পণ্যে ৩ হাজার ৫২১ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের মতো নজিরবিহীন পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
গত বছর মার্কিন সোলার প্যানেল উৎপাদনকারীরা তৎকালীন বাইডেন প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন যে, চীনের কোম্পানিগুলো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এসব দেশে কারখানা তৈরি করে সেখান থেকে সস্তা সোলার প্যানেল যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দেশীয় কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই এক বছর পর মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই উচ্চ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব পেশ করল।
এই শুল্কগুলো সাধারণত পাল্টাপাল্টি এবং ডাম্পিং-বিরোধী শুল্ক (countervailing and anti-dumping duties) হিসাবে পরিচিত, যা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও দেশ ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
প্রস্তাবিত শুল্কের মধ্যে কম্বোডিয়ার কিছু কোম্পানির সোলার প্যানেলের ওপর ৩ হাজার ৫২১ শতাংশের মতো আকাশছোঁয়া শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তে কম্বোডিয়ার কিছু কোম্পানি সহযোগিতা না করায় তাদের ওপর এমন অভাবনীয় উচ্চ হারে শুল্ক বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, মালয়েশিয়ায় উৎপাদিত চীনের কোম্পানি জিনকো সোলারের পণ্যের ওপর ৪১ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। থাইল্যান্ডে পণ্য উৎপাদনকারী ত্রিনা সোলারের পণ্যে ৩৭৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভিয়েতনামের কোম্পানিগুলোর ওপরও বিভিন্ন হারে শুল্ক প্রস্তাব করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার ক্ষমতায় এসে চীনের বিভিন্ন পণ্যের ওপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করেছিলেন। ওই সময় চীনের অনেক সৌর প্যানেল নির্মাতা কোম্পানি শুল্ক থেকে বাঁচতে তাদের কারখানা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে স্থানান্তর করেছিল। ইউএস সেন্সাস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে এই চারটি দেশ থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সোলার প্যানেল আমদানি করেছিল।
এই অত্যাধিক শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সোলার প্যানেল উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো লাভবান হবে এবং তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে যেসব ভোক্তা এতদিন কম দামে সৌর প্যানেল ব্যবহার করতেন, তারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
এদিকে, এই উচ্চ শুল্ক প্রস্তাব আসার ঠিক এক সপ্তাহ আগে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং কম্বোডিয়া সফর করেন। সফরের সময় তিনি এই দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাণিজ্যিক গুণ্ডামি’ (trade bullying) রুখে দেওয়ার আহ্বান জানান। এর পরপরই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সোলার প্যানেলের ওপর এত বেশি শুল্ক আরোপের মার্কিন পরিকল্পনার বিষয়টি সামনে আসে।
মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাবের ওপর আগামী জুনে দেশটির আরেক সরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন (International Trade Commission – ITC) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
সূত্র: বিবিসি