“সুপ্রিম কোর্টে ৭৩টি মামলা”-Waqf আইন রুখতে আজ আদালতে শুরু হচ্ছে আইনি লড়াই

ওয়াকফ (Waqf) আইনে সাম্প্রতিক সংশোধনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া ৭৩টি পৃথক মামলার শুনানি আজ বুধবার থেকে শুরু করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, সঞ্জয় কুমার ও কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ আজ প্রথম দফায় ১০টি মামলার শুনানি করবে।
এই আইন নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একদিকে যেমন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মুসলিম সংগঠনগুলি এর বিরোধিতা করছে, তেমনই হিন্দু সমাজের পক্ষ থেকেও কয়েকটি মামলায় এই আইনের সাংবিধানিকতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার সহ মোট ৭টি রাজ্য এই সংশোধিত আইনের পক্ষেই আদালতে সওয়াল করেছে।
ওয়াকফ আইন কী?
ওয়াকফ হল একটি ইসলামিক ধর্মীয় ব্যবস্থা, যেখানে কোনও মুসলিম ব্যক্তি তার সম্পত্তি—জমি, বাড়ি, দোকান বা অন্য কোনও সম্পদ—চিরতরে ধর্মীয় বা জনকল্যাণমূলক উদ্দেশ্যে দান করেন। এই সম্পত্তি পরিচালনার জন্য ওয়াকফ বোর্ড গঠিত হয়। ভারতে রাজ্যভিত্তিক ওয়াকফ বোর্ড এই সম্পত্তিগুলির তত্ত্বাবধান করে। ভারতে প্রথম ওয়াকফ আইন চালু হয় ১৯৫৪ সালে, এরপর ১৯৯৫ সালে নতুন আইন প্রণীত হয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে, যা বর্তমান বিতর্কের মূল কারণ।
নতুন আইনে কী কী পরিবর্তন আনা হয়েছে?
১. ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্য নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
২. ওয়াকফ বোর্ডের নির্বাচনী কাঠামো বাতিল করে সরকার মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়োগের বিধান আনা হয়েছে।
৩. ‘ওয়াকফ বাই ইউসেজ’—অর্থাৎ দীর্ঘদিনের ব্যবহারজনিত কারণে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হওয়ার নিয়ম বাতিল করা হয়েছে।
৪. ওয়াকফ সম্পত্তির উপর সরকারের হস্তক্ষেপের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মহল।
কেন উঠছে বিরোধের সুর?
মামলাকারীদের অভিযোগ, এই সংশোধিত আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অধিকার খর্ব করছে। এছাড়াও, বহু পুরনো ওয়াকফ সম্পত্তি, যেগুলির কোনও লিখিত নথি নেই এবং যা মৌখিকভাবে দান করা হয়েছিল, সেগুলি এই আইনের ফলে অবৈধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে সরকারি জমিকে ওয়াকফ হিসেবে ঘোষণা করে দখলের আশঙ্কাও প্রকাশ পেয়েছে। হিন্দু পক্ষের কিছু মামলায় ওয়াকফ আইন ব্যবহার করে হিন্দু মন্দির বা দেবোত্তর সম্পত্তির অবৈধ দখলের আশঙ্কাও উত্থাপন করা হয়েছে।
কে কার পক্ষে?
এই আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআই, AAP, AIMIM সহ একাধিক রাজনৈতিক দল। দক্ষিণী তারকা বিজয়ের দল টিভিকে (TVK) এবং YSR কংগ্রেসও এই মামলায় যুক্ত হয়েছে। এছাড়াও অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড, জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ এবং সামাস্থ কেরালা জামিয়াথুল উলেমার মতো ধর্মীয় সংগঠনগুলিও আইনের বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে, কেন্দ্র সরকার সহ সাতটি রাজ্য এই আইনকে সমর্থন জানিয়েছে। তাদের দাবি, ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতেই এই সংশোধন জরুরি।
আজ সুপ্রিম কোর্টে কী হচ্ছে?
আজ দুপুর ২টোর পর বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে এই মামলাগুলির শুনানি শুরু হয়েছে। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই ‘ক্যাভিয়েট’ (Caveat) দাখিল করেছে, যার অর্থ হল আদালত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের বক্তব্যও শুনবে। মনে করা হচ্ছে, এই আইনি লড়াই দীর্ঘ সময় ধরে চলবে এবং এর রায় দেশের ধর্মীয় সম্পত্তির ভবিষ্যতের গতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।