ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) সাধারণ মানুষকে বড়সড় স্বস্তি দিয়ে রেপো রেট ২৫ базис পয়েন্ট কমিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশেষত হোম লোন, গাড়ি লোন বা অন্য কোনও ব্যাঙ্ক ঋণের ইএমআই কমবে। সুদের হার কমানোর পাশাপাশি, RBI ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCI)-কে UPI পেমেন্টের লেনদেনের সীমা বাড়ানোর অধিকারও দিয়েছে।

আজ মনিটারি পলিসি কমিটির (MPC) বৈঠকের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা। তিনি জানান, অর্থনীতির চাহিদা এবং লেনদেনের প্রকৃতির কথা মাথায় রেখে ব্যক্তি-থেকে-ব্যবসায়ী (P2M) UPI পেমেন্টের লেনদেনের সীমা পরিবর্তন করার জন্য RBI, NPCI-কে অনুমতি দিয়েছে। অর্থাৎ, প্রয়োজন অনুযায়ী এই লেনদেনের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো যেতে পারে।

NPCI-কে দেওয়া কর্তৃত্ব:

গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা স্পষ্ট করে বলেছেন যে, এখন থেকে ব্যক্তি-থেকে-ব্যবসায়ী (P2M) এবং ব্যবসায়ী-থেকে-ব্যবসায়ী (B2B) পেমেন্টের লেনদেনের সীমা নির্ধারণের সম্পূর্ণ অধিকার NPCI-র হাতে থাকবে। বর্তমানে এই সীমা ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। তবে, ভবিষ্যতে NPCI এই সীমা পরিবর্তন করতে পারবে। যদিও, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি (P2P) UPI লেনদেনের ক্ষেত্রে বর্তমানের ১ লক্ষ টাকার সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

UPI লেনদেনে পরিবর্তন প্রত্যাশিত:

ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবহার আরও বাড়ানোর লক্ষ্যেই NPCI-কে UPI-এর মাধ্যমে ব্যক্তি-থেকে-ব্যবসায়ী লেনদেনের সীমা নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে, ব্যক্তি-থেকে-ব্যক্তি এবং ব্যক্তি-থেকে-ব্যবসায়ী উভয় ক্ষেত্রেই লেনদেনের ঊর্ধ্বসীমা ১ লক্ষ টাকা নির্ধারিত আছে। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যক্তি-থেকে-ব্যবসায়ী লেনদেনের সীমা ২ লক্ষ টাকা এবং ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এবার NPCI নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী এই সীমা নির্ধারণ করতে পারবে।

গভর্নর মালহোত্রা আরও জানান যে, লেনদেনের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি কমানোর জন্য যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। NPCI কর্তৃক ঘোষিত সীমার মধ্যে ব্যাঙ্কগুলির নিজস্ব অভ্যন্তরীণ লেনদেনের সীমা নির্ধারণের অধিকার বজায় থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক স্পষ্ট জানিয়েছে যে UPI-তে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি (P2P) লেনদেনের সীমা আগের মতোই ১ লক্ষ টাকা থাকবে। মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় আরবিআই প্রধান বলেছিলেন যে পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটররা ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করার পরই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

রেকর্ড গড়েছে UPI পেমেন্ট:

মার্চ মাসে UPI লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৩.৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এই লেনদেনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮.৩ বিলিয়ন। ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১৬.১১ বিলিয়ন। NPCI-এর তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে UPI-এর মাধ্যমে ২৪.৭৭ লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা ফেব্রুয়ারুয়ারির ২১.৯৬ লক্ষ কোটি টাকার লেনদেনের তুলনায় ১২.৭৯ শতাংশ বেশি।

পরিসংখ্যান বলছে, গড়ে প্রতিদিন UPI নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ৫৯ কোটিরও বেশি লেনদেন হচ্ছে, যার মোট মূল্য প্রায় ৭৯,৯১০ কোটি টাকা। অন্য একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে UPI লেনদেন ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মোট ৯৩.২৩ বিলিয়ন লেনদেনে পৌঁছেছে। রেপো রেট কমানো এবং UPI লেনদেনের সীমা বৃদ্ধির এই জোড়া পদক্ষেপ দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।