ভারতে নতুন অভিবাসন বিল পাস, বিদেশিদের জন্য তৈরী হলো কঠোর নিয়ম

ভারতের পার্লামেন্টে অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিক সংক্রান্ত একটি নতুন বিল চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। আজ, বুধবার (২ এপ্রিল) বিলটি রাজ্যসভায় পাস হওয়ার মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ অতিক্রম করলো। এর আগে, গত ২৮ মার্চ বিলটি লোকসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছিল। এখন এই বিলটি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতির জন্য পাঠানো হবে এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেই এটি আইনে পরিণত হবে।
প্রস্তাবিত এই নতুন আইন সম্পর্কে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে বলেছেন, এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হল ব্যবসা, পড়াশোনা অথবা বিনিয়োগের জন্য ভারতে আসা বিদেশি নাগরিকদের স্বাগত জানানো। তবে, যারা দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
লোকসভায় বিলটি নিয়ে আলোচনার সময় অমিত শাহ আরও বলেন, এই আইন দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করবে, অর্থনীতির উন্নতিতে সহায়ক হবে এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতের সুনাম বৃদ্ধি করবে। এটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদান করতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, এই আইনের মাধ্যমে ভারতে আসা প্রত্যেক বিদেশি নাগরিকের বিস্তারিত তথ্য সরকারের কাছে নথিভুক্ত থাকবে। তারা কেন এসেছেন, কতদিন থাকবেন এবং তাদের গতিবিধি সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখা হবে।
নতুন বিলে যা আছে:
প্রস্তাবিত নতুন আইনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান যুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো:
- যদি কোনো বিদেশি ব্যক্তি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব বা অখণ্ডতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে, তাহলে তাকে দেশে প্রবেশ বা অবস্থানের অনুমতি দেওয়া হবে না।
- ভারতে প্রবেশের পর সকল বিদেশি নাগরিককে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। তাদের চলাফেরা, নাম পরিবর্তন বা নিষিদ্ধ এলাকায় গমনাগমন নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
- দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমগুলোকে তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বা কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের সম্পর্কে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত অবহিত করতে হবে।
- আইনের কোনো প্রকার লঙ্ঘন করলে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শাস্তিগুলো হলো:
- বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া ভারতে প্রবেশ করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
- জাল নথি ব্যবহার করলে দুই থেকে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং এক লাখ থেকে দশ লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
- ভিসার শর্ত লঙ্ঘন, নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ অথবা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অতিরিক্ত সময় অবস্থান করলে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড ও তিন লাখ রুপি জরিমানা করা হবে।
- বৈধ নথিপত্র ছাড়া বিদেশিদের বহনকারী পরিবহন সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ রুপি জরিমানা গুনতে হবে এবং জরিমানা পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদের যানবাহন বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।
- যদি কোনো বিদেশিকে ভারতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া হয়, তবে সংশ্লিষ্ট পরিবহন সংস্থাকে অবিলম্বে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর দায়িত্ব নিতে হবে।
- প্রস্তাবিত আইনে অভিবাসন কর্মকর্তাদের কোনো প্রকার পরোয়ানা ছাড়াই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বিদেশিদের চলাচল নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকার আরও বেশি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।
- অনুমোদিত কোনো সংস্থার প্রয়োজন হলে, কেন্দ্রীয় সরকার কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে।
নতুন এই অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিক সংক্রান্ত বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পর ভারতে বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশ, অবস্থান এবং কার্যকলাপের উপর আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্যসূত্র: ইকোনমিক টাইমস।