হিমঘরে রেখেও উদ্বৃত্ত ৪ লক্ষ মেট্রিক টন আলু , অতিরিক্ত আলু নিয়ে বিপাকে কৃষকরা

কোচবিহার জেলায় এবার আলুর বাম্পার উৎপাদন হয়েছে, কিন্তু হিমঘরে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি উদ্বৃত্ত আলু নিয়ে গভীর চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। এই বিপুল পরিমাণ আলু কোথায় রাখা হবে বা কীভাবে বাজারে পৌঁছানো যাবে, তা নিয়ে কৃষি ও কৃষি বিপণন দপ্তরের কাছে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার খবর পাওয়া যায়নি।

উৎপাদন বেশি, সংরক্ষণের জায়গা কম

কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা থেকে ১৪ লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপন্ন হয়েছে। এর মধ্যে কৃষকদের নিজেদের খাদ্য চাহিদা এবং বাজারে প্রাথমিক বিক্রির জন্য প্রায় ৪০ শতাংশ আলু ব্যবহৃত হবে। বাকি ৬০ শতাংশ, অর্থাৎ ৮ লক্ষ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আলু হিমঘরে সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু জেলায় বর্তমানে ২২টি হিমঘরের মোট ধারণক্ষমতা মাত্র ৩ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। ফলে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত আলু নিয়ে কৃষকরা দিশাহারা।

কৃষকদের দুশ্চিন্তা

আলুচাষি আবু মোতালেব মিঁয়া ও নুর আলম হক জানান, “গত বছর অসমে আলু পাঠানো নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। তাই এবার আমরা উৎপাদন বাড়িয়েছি। কিন্তু এখন অসমে আলু যাচ্ছে না, বাংলাদেশেও রপ্তানি বন্ধ। হিমঘরে জায়গা নেই, মাঠে এখনও প্রচুর আলু পড়ে আছে। ব্যবসায়ীরা কেজি প্রতি সাত টাকার বেশি দাম দিচ্ছেন না। এভাবে চললে আমরা লোকসানে পড়ব।” তাঁরা মনে করেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারি নীতিতে পরিবর্তন আনা জরুরি।

কৃষি বিপণন দপ্তরের প্রতিক্রিয়া

জেলার কৃষি বিপণন দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর সাব্বির আলি বলেন, “এখনও পর্যন্ত এমন কোনও সমস্যার কথা আমাদের কাছে আসেনি। কৃষকরা যদি কোনও নির্দিষ্ট এলাকার সমস্যার কথা জানান, তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।” তবে কৃষকদের অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে দপ্তরের তৎপরতার অভাব স্পষ্ট।

হিমঘরের অভাব ও সমাধানের দাবি

কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে কাজ করা ফারমার্স ক্লাবের প্রতিনিধি অমল বর্মন বলেন, “কোচবিহারের সব ব্লকে এখনও হিমঘর নেই। হিমঘরের সংখ্যা ও ধারণক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। তাহলেই গরিব কৃষকরা তাদের আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন এবং লোকসান এড়াতে পারবেন।” তিনি আরও যোগ করেন, সরকারি উদ্যোগে রপ্তানির পথ খোলা এবং বাজার ব্যবস্থার উন্নতি না হলে কৃষকদের এই সংকট থেকে মুক্তি মিলবে না।

বাজারে দামের বৈষম্য

মার্চ মাস জুড়ে জেলার হিমঘরে আলু রাখার কাজ শুরু হয়েছে। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে এই আলু বাজারে ছাড়া হবে। কিন্তু কৃষকরা যেখানে কেজি প্রতি সাত টাকা দাম পাচ্ছেন, সেখানে খুচরো বাজারে একই আলু ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই বিশাল দামের বৈষম্য নিয়ে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন, এখানে কালোবাজারি ও ফাটকাবাজির হাত রয়েছে।

কোচবিহারের আলুচাষিরা এখন দ্বিমুখী সংকটে—একদিকে উৎপাদনের পর্যাপ্ত সংরক্ষণের জায়গা নেই, অন্যদিকে বাজারে ন্যায্য দাম মিলছে না। হিমঘরের সংখ্যা বাড়ানো, রপ্তানির পথ সুগম করা এবং বাজার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা না আনলে এই সংকট আরও গভীর হতে পারে। কৃষি দপ্তরের দ্রুত পদক্ষেপই এখন কৃষকদের আশার আলো দেখাতে পারে।