আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ‘বিপ্লব’ ঘটাবে AI -এর এই মডেল, জেনেনিন কি বলছে বিজ্ঞানীরা

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ‘আর্ডভার্ক ওয়েদার’ নামে একটি এআই-নির্ভর আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল তৈরি করেছেন, যা প্রচলিত পূর্বাভাস ব্যবস্থার তুলনায় দশগুণ উন্নত বলে দাবি করা হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, এই মডেল আবহাওয়া পূর্বাভাসে ‘বিপ্লব’ ঘটাতে পারে এবং এটি একটি সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটারে চলতে সক্ষম। ব্রিটিশ দৈনিক ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রচলিত পদ্ধতির বিকল্প
বর্তমানে আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য বিভিন্ন সংস্থা সুপার কম্পিউটার এবং বিশেষজ্ঞ দলের ওপর নির্ভর করে, যেখানে পূর্বাভাস তৈরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু ‘আর্ডভার্ক’ মডেলটি একটি একক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে ‘মাল্টি-স্টেজ’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূর্বাভাস তৈরি করে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেশিন লার্নিংয়ের অধ্যাপক রিচার্ড টার্নার বলেন, “আর্ডভার্ক প্রচলিত পূর্বাভাস পদ্ধতিকে নতুনভাবে খতিয়ে দেখছে। এটি দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং নির্ভুল পূর্বাভাসের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।”
কার্যকারিতার প্রমাণ
পরীক্ষায় দেখা গেছে, ‘আর্ডভার্ক’ মডেলটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম’ (জিএফএস)-এর তুলনায় মাত্র ১০ শতাংশ ইনপুট ডেটা ব্যবহার করে আরও কার্যকর ফলাফল দিতে পারে। এই দক্ষতার কারণে গবেষকরা এটিকে আবহাওয়া পূর্বাভাসের ‘বিপ্লব’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মডেলটির সহজ নকশা এবং সাধারণ কম্পিউটারে চলার সক্ষমতা এটিকে বিভিন্ন শিল্প ও অঞ্চলের জন্য ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে।
ব্যবহারের সম্ভাবনা
‘আর্ডভার্ক’ মডেলটি উপকূলীয় ইউরোপে উইন্ডমিলের জন্য বাতাসের গতি থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশের কৃষকদের জন্য বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিতে পারে। ‘অ্যালান টিউরিং ইনস্টিটিউট’-এর পরিচালক ড. স্কট হসকিং বলেন, “আর্ডভার্কের সাফল্য শুধু গতির বিষয় নয়, বরং এর ব্যবহারযোগ্যতার বিষয়েও। এটি পূর্বাভাসকে সুপার কম্পিউটার থেকে ডেস্কটপে নিয়ে এসে সবার জন্য উন্মুক্ত করছে। এর ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চল ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এটি কাজে লাগানো সম্ভব।”
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
গবেষণার প্রধান গবেষক ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনা অ্যালেন বলেন, “আর্ডভার্কের যাত্রা সবে শুরু। এর এন্ড-টু-এন্ড লার্নিং পদ্ধতি হারিকেন, দাবানল ও টর্নেডোর মতো জটিল আবহাওয়া ঘটনার পূর্বাভাসে প্রয়োগ করা যেতে পারে।” তিনি আরও জানান, আবহাওয়ার বাইরে বায়ুর গুণমান, সমুদ্রের গতিবিদ্যা এবং সমুদ্রের বরফের পূর্বাভাসেও এটি ব্যবহার করা সম্ভব।
গবেষণার প্রকাশ
‘এন্ড টু এন্ড ডেটা ড্রাইভেন ওয়েদার প্রেডিকশন’ শিরোনামে এই গবেষণা ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা মনে করেন, এই মডেলটি কেবল আবহাওয়া পূর্বাভাসের গতি ও নির্ভুলতা বাড়াবে না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
‘আর্ডভার্ক ওয়েদার’ এআই প্রযুক্তির শক্তি এবং প্রকৃতির জটিলতা বোঝার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি কীভাবে বৈশ্বিক আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করে, সেদিকে নজর রাখছে বিশ্ব।