স্ট্রিমিং সেবা খাতে বছরে ১০০ কোটি ডলার হারাচ্ছে অ্যাপল, লোকসানের মুখে পড়ছে সংস্থা

অ্যাপল টিভি প্লাস-এর সাবস্ক্রিপশন কমে যাওয়ায় প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল তার স্ট্রিমিং পরিষেবায় বছরে একশ কোটি ডলারেরও বেশি লোকসানের মুখে পড়েছে। আমেরিকান সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইনফরমেশন’ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে দুই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বরাত দিয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ সালে অ্যাপল টিভি প্লাস চালুর পর থেকে কনটেন্ট তৈরিতে বছরে পাঁচশ কোটি � PSYডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে অ্যাপল। তবে গত বছর খরচ কমানোর উদ্যোগে এই বাজেট থেকে প্রায় ৫০ কোটি ডলার কাটছাঁট করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি আইফোন নির্মাতা এই কোম্পানি।

জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও পিছিয়ে

‘টেড ল্যাসো’, ‘দ্য মর্নিং শো’, ‘শ্রিংকিং’ এবং ‘সিভারেন্স’-এর মতো সমাদৃত মৌলিক অনুষ্ঠানের জন্য পরিচিত অ্যাপল টিভি প্লাস। তবে গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে এটি প্রতিদ্বন্দ্বী নেটফ্লিক্স, ডিজনি প্লাস এবং অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওর তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নেটফ্লিক্সের গ্রাহক সংখ্যা ৩০ কোটি ১ লাখ, ডিজনি প্লাসের ১২ কোটি ৪৬ লাখ এবং ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারির ১১ কোটি ৬৯ লাখ। অ্যাপল টিভি প্লাস-এর গ্রাহক সংখ্যা অফিসিয়ালি প্রকাশ না করা হলেও, ‘ভিজিবল আলফা’র পাঁচ বিশ্লেষকের জরিপে অনুমান করা হয়েছে যে ২০২৪ সালের শেষে এটি ৪ কোটি ৪ লাখে পৌঁছেছে।

সাফল্যের স্বীকৃতি

অ্যাপলের সিইও টিম কুক গত জানুয়ারিতে এক উপার্জন প্রতিবেদনের সময় বলেছিলেন, “অ্যাপল টিভি প্লাস-এর প্রোগ্রামগুলো ২,৫০০-এর বেশি মনোনয়ন এবং ৫৩৮টি পুরস্কার জিতেছে।” এর মধ্যে ‘কোডা’র মতো চলচ্চিত্র অস্কার জিতে প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে এই সাফল্য সত্ত্বেও আর্থিক ক্ষতি এড়াতে পারেনি স্ট্রিমিং পরিষেবাটি।

প্রতিযোগিতা ও কৌশল

স্ট্রিমিং শিল্পে প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ায় গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পরিষেবায় ছাড় ও বান্ডল অফার বাড়িয়েছে। অ্যাপল টিভি প্লাস যুক্তরাষ্ট্রে ‘কমকাস্ট’ ব্রডব্যান্ডের সঙ্গে একটি বান্ডলে পিকক এবং নেটফ্লিক্সের পাশাপাশি মাসে ১৫ ডলারে দেওয়া হচ্ছে। আলাদাভাবে এই পরিষেবার জন্য গ্রাহকদের মাসে ৯.৯৯ ডলার খরচ করতে হয়। এছাড়া, অ্যাপল ওয়ান প্রোগ্রামের আওতায় আইক্লাউড, অ্যাপল মিউজিক এবং অন্যান্য পরিষেবার সঙ্গে এটিকে যুক্ত করা হয়েছে।

আর্থিক প্রেক্ষাপট

অ্যাপলের সামগ্রিক ব্যবসায় এই লোকসান তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালে কোম্পানিটির মোট আয় ছিল ৩৯১ বিলিয়ন ডলার এবং নিট মুনাফা ৯৩.৭ বিলিয়ন ডলার। স্ট্রিমিং ব্যবসাটি অ্যাপলের ‘সার্ভিসেস’ বিভাগের অংশ, যেখানে অ্যাপল মিউজিক, অ্যাপ স্টোর এবং অন্যান্য পরিষেবাও রয়েছে। তবে অ্যাপল টিভি প্লাস-এর নির্দিষ্ট আর্থিক তথ্য প্রকাশ না করায় এর প্রকৃত অবস্থা স্পষ্ট নয়।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ

বিশ্লেষকদের মতে, অ্যাপল টিভি প্লাস-এর সাবস্ক্রিপশন কমে যাওয়া এবং প্রতিযোগীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়া কোম্পানির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। নেটফ্লিক্সের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীরা বিশাল গ্রাহক ভিত্তি এবং বিপুল কনটেন্ট লাইব্রেরির সুবাদে এগিয়ে রয়েছে। অ্যাপলের কৌশলগত পদক্ষেপ, যেমন খরচ কমানো এবং বান্ডল অফার, এই ক্ষতি পুষিয়ে গ্রাহক বাড়াতে কতটা সফল হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।