বিশেষ: ৮ দিনের অভিযান ৯ মাসে গড়াল, কত বেতন পাবেন সুনিতা ও বুচ? জেনেনিন বিস্তারিত

নয় মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) আটকে থাকার পর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন নাসার দুই নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস। স্পেসএক্স ও নাসার এক যৌথ মিশনের মাধ্যমে তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গত জুন মাসে বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে করে আইএসএসে যাওয়া এই দুই নভোচারীর ৮ দিনের পরীক্ষামূলক অভিযান প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে নয় মাসেরও বেশি সময়ে দাঁড়িয়েছিল।

কীভাবে এত দীর্ঘ সময় মহাকাশে?

বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানটি প্রথমবারের মতো মনুষ্যবাহী পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে গত জুন মাসে আইএসএসের উদ্দেশে যাত্রা করে। কিন্তু মহাকাশে পৌঁছানোর পর যানটি বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হয়, যার মধ্যে হিলিয়াম ফাঁস ও থ্রাস্টারের ত্রুটি অন্যতম। এর ফলে নভোচারীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। নাসা শেষ পর্যন্ত স্টারলাইনারকে ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলের মাধ্যমে তাদের পৃথিবীতে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকের প্রত্যাশা কতটা যৌক্তিক?

নয় মাসেরও বেশি সময় আইএসএসে কাটানোর পর অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে, এত দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার জন্য কি বুচ ও সুনিতা মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক পাবেন? সাধারণ বিবেচনায় মনে হতে পারে, এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্য তাদের বিশেষ বেতন দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

নাসার অবসরপ্রাপ্ত নভোচারী ক্যাডি কোলম্যান জানিয়েছেন, নভোচারীরা তাদের নিয়মিত বেতনের বাইরে কোনো উল্লেখযোগ্য ওভারটাইম ভাতা পান না। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মী হিসেবে নভোচারীদের কাজকে পৃথিবীতে কর্মরত সাধারণ কর্মীদের সমতুল্য বিবেচনা করা হয়। কোলম্যান বলেন, “কিছু আনুষঙ্গিক ঘটনার ক্ষেত্রে আইনগতভাবে নাসাকে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হতে পারে।” তবে এই অর্থের পরিমাণ দিনপ্রতি মাত্র চার ডলার হতে পারে। সেই হিসেবে, নয় মাসে তাদের প্রত্যেকের প্রাপ্য হয় মোট এক হাজার চার ডলার, যা বড় অঙ্কের কাছাকাছিও নয়।

‘আটকে ছিলেন না’—নাসার দাবি

নাসা বারবার জোর দিয়ে বলেছে, বুচ ও সুনিতা আইএসএসে ‘আটকে’ ছিলেন না। ‘হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এর জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী জোনাথন ম্যাকডোয়েল বলেছেন, “নাসার যুক্তি হলো, তারা ঠিক আটকা পড়েননি। এই পরিস্থিতি অনেক বেশি অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। তারা ভালো আছেন, শুধু অতিরিক্ত সময় মহাকাশে কাটাতে হয়েছে। এটা তাদের পছন্দের কাজ, এবং তারা পরবর্তী যাত্রায় ফিরে আসতেন।”

মহাকাশে সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা

মহাকাশে থাকাকালীন বুচ ও সুনিতা বিভিন্ন গবেষণা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ছবি ও ভিডিওতে তাদের শারীরিক পরিবর্তন স্পষ্ট হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী ওজনহীনতার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে তাদের প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হয়েছে। তবে সুনিতা এই অভিজ্ঞতা নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম কিছু সময়ের জন্য এখানে থাকব। কিন্তু এই অতিরিক্ত সময় আমাদের বিজ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষার নতুন সুযোগ দিয়েছে।”

বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামসের এই দীর্ঘ মহাকাশ যাত্রা প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ ও মানবিক সহনশীলতার এক অনন্য উদাহরণ। তবে তাদের প্রাপ্ত পারিশ্রমিক নিয়ে হতাশা থাকলেও, এই অভিযান তাদের পেশাদার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে থাকবে। নাসা ও স্পেসএক্সের যৌথ প্রচেষ্টায় তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার জয়গান গাইছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy